নিজস্ব প্রতিবেদক: গান গাইতে গাইতে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে আরেকদল যুবক। শাহাদাত হোসেন নামের ২৪ বছর বয়সী ওই যুবকের দুই হাত স্টিলের পাইপের সঙ্গে বেঁধে ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গান গাইতে গাইতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর নিথর দেহ ফেলে রাখা হয় চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনের রাস্তায়।
ঘটনাটি গত ১৪ আগস্টের হলেও হত্যাকাণ্ডের সময় ধারণকৃত এক ভিডিও শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
ভুক্তভোগী যুবক শাহাদাত হোসেন নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। কর্মসূত্রে বসবাস করতেন চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) পুলিশ জানায়, গত ১৪ আগস্ট নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় নির্মম এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যার পর মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট ভিকটিমের বাবা মোহাম্মদ হারুন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করা হয়। ওই সময় শাহাদাতকে মারধরের ভিডিওটি ফেসবুকে আসেনি। গত দুইদিন ধরে ওই ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে নড়েচড়ে বসে নগর পুলিশ প্রশাসন।
মামলার বাদী নিহতের বাবা মোহাম্মদ হারুন জানান, শাহাদাত চট্টগ্রাম নগরীর বিআরটিসি এলাকার ফলমণ্ডিতে কাজ করতেন। দুই বছর আগে শারমীন আক্তার নামের এক নারীকে বিয়ে করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে কর্মস্থলে যেতে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবেন বলে স্ত্রীকে জানান। গভীর রাত পর্যন্ত স্বামী বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি করেন শারমিন। এ সময় শাহাদাতের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাদী ফেসবুকে জানতে পারেন, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে শাহাদাতের মরদেহ পড়ে আছে।
এর আগে খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহাদাতের নিথর দেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন রাতেই চমেক হাসপাতালে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে শাহাদাতের মরদেহ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী শারমীন আক্তার এবং মামলার বাদী ও শাহাদাতের বাবা হারুন।
পুলিশ জানায়, চমেক হাসপাতালে মৃত ঘোষণার পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য শাহাদাতের মরদেহ চমেকের ফরেনসিক মর্গে পাঠায় পুলিশ।
সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহাদাত হোসেনের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বাদীর ধারণা অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা শাহাদাতকে মারধরের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় পরদিন একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের মুখপাত্র উপ-কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন রোববার বলেন, এক যুবককে দুই হাত বেঁধে গান গেয়ে মারধরের একটি ভিডিও গত ২১ সেপ্টেম্বর আমাদের নজরে আসে। ওই ভিডিও বিশ্লেষণ করে জানতে পারি মারধরের শিকার যুবকটিই শাহাদাত হোসেন। আমরা তার স্ত্রীকে থানায় ডেকে পাঠাই। থানায় এলে ওই ভিডিও তাকে দেখানো হলে ভিডিও চিত্রে দেখা যাওয়া যুবকটি তার স্বামী বলে শনাক্ত করেন।
অভিযুক্তদের শনাক্ত করে তাদের শিগগির আইনের আওতায় আনতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানান মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন।
একে