নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বেসরকারি খাতের নয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি ছোট ব্যাংক আছে; যারা বেশ তারল্য সংকটে পড়েছে। এদের বেশিরভাগই শরীয়াহ ধারায় পরিচালিত। এসব ছোট ছোট ব্যাংক একীভূত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ইঙ্গিত দেন তিনি।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, তারল্য সংকটে থাকা কিছু ছোট ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগ মালিকানা এখন সরকারের অধীনে। তাই সরকারের ক্ষেত্রে একীভূত করা সহজ হবে। তবে, বাস্তবতা বুঝে আমরা কাজ করব। ব্যাংক একীভূত হলেও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা নয়টি ব্যাংকের অডিট করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছি। আমরা তিনটি করে ব্যাংকের অডিট করব। এ প্রক্রিয়ার শুরুতেই ইসলামী ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত থাকবে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এসব ব্যাংকের প্রতিটি ঋণ অডিট করা হবে এবং সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করা হবে।
এছাড়া, বর্তমানে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর নিট ডিপোজিট ইতিবাচক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সমস্যায় থাকা ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহক টাকা তুলে অন্য ব্যাংকের রাখছে জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, যেসব ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হচ্ছে, তারা তারল্য সংকটে পড়ছে। আবার যাদের কাছে রাখা হচ্ছে তাদের তারল্য বেড়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমরা গ্যারান্টার হয়ে তারল্য বেশি থাকা ব্যাংকগুলো থেকে কম থাকা ব্যাংকগুলোকে টাকা দেব। এক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংক টাকা না দিতে পারলে ওই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশোধ করবে। এখন পর্যন্ত এই স্কিম থেকে কাউকেই টাকা দেওয়া হয়নি। যদি এদের অবস্থা ভালো হয়ে যায়, তাহলে কাউকে দিতেও হবে না। প্রয়োজন বোধে দেব। যার যত টাকা দরকার সেই অনুযায়ী টাকা দেওয়া হবে। তবে, এসব ব্যাংকে এখন ক্যাশ-ফ্লো ভালো রয়েছে। গত কয়েকদিনে ব্যাংকগুলোর তারল্য উদ্বৃত্ত আছে ৮১০ কোটি টাকা। আশা করি সমস্যা সমাধান হবে।
বাড়ানো হবে নীতি সুদহার: বাড়তে থাকা খাদ্যপণ্যের তথা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফের পলিসি রেট বা নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি সপ্তাহে এ সুদহার বাড়ানো হবে। পর্যায়ক্রমে তা আগামী মাসেও বাড়বে বলে জানান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৭৩ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া. গত জুলাইয়ে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১.৬৬ শতাংশ হয়, যা ২০১০-১১ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ। গেল অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি ছিল।
পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০২২ সালের মে মাস থেকে বেশ কয়েকবার সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পলিসি রেট বাড়াচ্ছে। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়েছে এবং ঋণ নেওয়া আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এআরএস