শনিবার | ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১১ মাঘ, ১৪৩১

পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ, ১০ লাখ টাকা লাভের আশা মল্লিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা বর্ষার জলাবদ্ধতার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে ১০ হাজার আদা গাছ। দেড়ফুট জলাবদ্ধ জায়গায় বস্তার মধ্যে বেড়ে উঠছে হাজারো আদা গাছ। নড়াইল সদরের প্রত্যন্ত গ্রাম বামনহাটের এক কৃষাণী এ বছর ওই আদা চাষ করেছেন। ৯ মাসের এই ফসলে তার লাভ হবে প্রায় ১০ লাখ টাকা।

নড়াইলের প্রত্যন্ত বামনহাট গ্রামের কৃষাণী মল্লিকা রায়। বসতভিটার পাশে প্রায় দেড় একর নিচু জমিতে ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন।

টানা বর্ষার জলে মাঠ-ঘাটে ফসলের ক্ষতি হলেও পানির মধ্যে বস্তায় উকি দিচ্ছে হাজারো তরতাজা আদা গাছ। বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ এলাকায় নতুন হলেও কৃষি বিভাগের পরামর্শে দামী এই মসলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষি উদ্যোক্তারা। দেশের মসলার মধ্যে আদা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দামী উপাদান। আর সেই আদা বাণিজ্যিকভাবে বস্তা পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে নড়াইল জেলার প্রত্যন্ত বামনহাট গ্রামে। এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটি বাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়েও নিয়ে যাওয়া যায়। কৃষি খাতে আধুনিকতার প্রসার ঘটায় বর্তমান সময়ে বাড়ির উঠান কিংবা পতিত,নিচু জলাশয় জমিতে বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছে চাষিরা। অল্প খরচ আর অধিক লাভ হওয়ায় সাথী ফসল হিসেবে বস্তায় আদা চাষ করছেন এলাকার কৃষক।

কৃষাণী মল্লিকা রায় জানান, সারা বছর এই জমিতে পানি থাকে এখানে অন্য কোনো ফসল হয় না। সিমেন্টের ফেলে দেয়া বস্তায় সার মাটি দিয়ে ৫০ গ্রাম করে আদা রোপণ করা হয়েছে। বস্তায় সারমাটি দিয়ে সেখানে ৫০ গ্রাম আদা দিয়ে অঙ্কুরোদগম ঘটানো হয়েছে। সবকিছুই করেছি আমার স্বামী আর মাঝেমধ্যে শ্রমিক নিয়ে। আশা করি ভালো ফলন পাবো। দেড় একর জমিতে সাড়ে ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবো। সবকিছু ঠিক থাকলে ১০ লাখ টাকা লাভের আশা করছি।

মল্লিকা ও তার স্বামী শক্তিপদ রায়ের এই উদ্যোগ দেখে খুশি এলাকার ও আশেপাশের লোকজন। পরিত্যক্ত জমি ব্যবহারে এদের দেখাদেখি মিতনা, তুলারামপুর, শেখহাটি এলাকায় ইতোমধ্যে ছোট-বড় আরও কয়েক বাড়িতে শুরু হয়েছে বস্তায় আদা চাষ।

এলাকার কৃষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, পানির মধ্যে আদা চাষ এটা দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। মল্লিকা রায়ের এই উদ্যোগ দেখে আমি অনেক খুশি। আমার নিচু এক একর জমিতে আদা চাষ করবো।

তুলারামপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজিব বিশ্বাস জানান, বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। অনেকের বাড়িতে এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করতে পারেন। আবার অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই। তাই স্থানীয় কৃষকরা বাড়িতে যে কোনো স্থানে এই চাষ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় প্রায় ৩০ হাজার বস্তায় বারি-২ আদা চাষ হয়েছে। এই পদ্ধতিতে আদা চাষ জনপ্রিয় হওয়ায় এ বছর মোট আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫০ মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪ গুণ। সাধারণ চাষে প্রতি গাছে সর্বোচ্চ ৮০০ গ্রাম আদা হলেও বস্তায় দেড় কেজি পর্যন্ত আদা ফলানো সম্ভব।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ছায়াযুক্ত জায়গাতে প্রধানত আদা চাষ করা যায়। সাধারণত বাঁশ বাগানের তলায় কোন ফসল চাষ হয় না। ফলে জায়গাটা পড়েই থাকে। সেই বাঁশ বাগানে বস্তায় আদা চাষ করা যায় খুব সহজেই।

চাষ পদ্ধতি: প্রথমে মাটির শুকনো ঢেলা ভেঙে চেলে নিতে হবে। যাতে ঝুরঝুরে হয়। বস্তায় মাটি যাতে ফেঁপে থাকে সেজন্যে ভার্মিকম্পোস্ট ও ছাই মেশাতে হবে। পরিমাণ মতো যোগ করতে হবে গোবর সার। মাটি তৈরি হয়ে গেলে বস্তায় ভরে চাষের জন্যে বসাতে হবে ৫০ গ্রামের একটি করে আদা রোপণ করতে হবে। সামান্য পানি দিতে হবে। এরপর বস্তার উপর ঢেকে দিয়ে রাখতে হবে। এতে মাটিতে আর্দ্রতা বেশিদিন থাকে । অল্প দিনের মধ্যেই কন্দ থেকে গাছ বেরিয়ে আসা শুরু করে।

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রোকনুজ্জামান বলেন, জলবায়ু প্রতিরোধে জলাবদ্ধ জায়গায় বস্তায় আদা চাষে কৃষক সফল হচ্ছে। সাধারণ চাষে প্রতি গাছে সর্বোচ্চ ৮০০ গ্রাম আদা হলেও বস্তায় দেড় কেজি পর্যন্ত আদা ফলানো সম্ভব।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক(উদ্যান) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি অনুদানে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা গেলে আদা চাষে ব্যাপক সফলতা সম্ভব। এতে করে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে কৃষকেরা ব্যাপক লাভবান হবেন। দামি এই মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ায় আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। এমএফ

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM