মঙ্গলবার | ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওবায়দুল কাদেরের ২৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকার ঘড়ি!

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানুষের অনেক রকম লোভের জায়গা থাকে। কারো থাকে দামি খাবারের প্রতি, কারো আবার দামি গাড়ি-বাড়ি কিংবা রাজ্য শাসনের লোভ। এমনই একটি লোভ আঁকড়ে ধরেছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে। তিনি ছিলেন ঘড়ি লোভী। বিশ্বের দামি দামি ঘড়ি উপহার পেতেই যত লোভ করেছিলেন। মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারদের কাছ থেকে তিনি উপহার হিসেবে ঘড়ি নিতেন। বিনিময়ে বড় বড় প্রজেক্টে কাজ দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পেশা ছিল লেখক ও সাংবাদিকতা। লেখালেখি থেকে তার আয় ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার আইনজীবী স্ত্রীর আয় ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এক যুগ পরে এসে তার বাৎসরিক আয় দাঁড়ায় ৩৮ লাখ ৭ হাজার ৫০৮ টাকা। পরিবর্তন হয় চালচলন ও পোশাকের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালে পরতেন নামিদামি অনেক ব্র্যান্ডের ঘড়ি। তার মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের হাতে দেখা গেছে, রোলেক্স ডে ডেট প্রেসিডেন্ট ঘড়ি, দাম ২৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা; লুই ভিতন জিএমটি ভয়েজার (পিঙ্ক গোল্ড সংস্করণ), দাম ১২ লাখ ৭২ হাজার টাকা; রোলেক্স ডেটজাস্ট, দাম ৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা; উলিস নাদা এক্সেকিউটিভ ডুয়াল টাইম, দাম ১০ লাখ ১৬ হাজার ২০০ টাকা; রোলেক্স সেলিনি (হোয়াইট গোল্ড), দাম ৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ও রোলেক্স ডেটজাস্ট (ডায়মন্ড ডায়াল), দাম ৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

এসব ঘড়ির ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এটা একেবারে ফর গডস সেক, আমি বলছি এগুলো আমার দামি পোশাক, এগুলো আমার কেনা না। আমি পাই, হয়ত আমাকে অনেকে ভালোবাসে, আমার অনেক কর্মী আছে, তারা বিদেশে আছে, আসার সময় স্যুট নিয়ে আসে। সিঙ্গাপুর থেকে একজন তিনটা কটি বানিয়ে নিয়ে এসেছে, এরকম এখন আপনি যদি নিয়ে আসেন, আমাকে উপহার দেন, আমি কি করব? এটা গিফট আইটেম!

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৩৮ লাখ ৭ হাজার ৫০৮ টাকা। পৈতৃক সূত্রে তিনি ৬০ শতাংশ কৃষিজমির মালিক। তবে ১৫ বছরে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৬ গুণের বেশি। তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট ইশরাতুন্নেছা কাদেরের অস্থাবর সম্পদও বেড়েছে একই সমান্তরালে। নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া চারটি হলফনামা থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পদ ছিল ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫ টাকা। তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৫২২ টাকা। ১৫ বছর পর ২০২৩ সালে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৮ টাকা এবং স্ত্রীর ১ কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার ৪৬৪ টাকা।

অভিযোগ সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রতি মাসেই হাতঘড়ি পরিবর্তন করতেন। প্রতিনিয়ত তিনি নতুন নতুন ঘড়ি পরে হাজির হতেন মিডিয়ার সামনে। দলের নেতাকর্মীরা এটি নিয়ে সরাসরি কথা বলার সাহস না পেলেও পেছনে অনেক সমালোচনা করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে টেন্ডার পাস করে দেওয়ার বিনিময়ে মন্ত্রী কাদের বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের খুবই দামি একটি হাতঘড়ি উৎকোচ হিসেবে নিতেন। একেক ঠিকাদার থেকে একেক কোম্পানির হাতঘড়ি চাইতেন। আবার অনেকে ওবায়দুল কাদেরের ঘড়ির প্রতি লোভ কাজ ভাগিয়ে নিতে কাজে লাগাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনে ওবায়দুল কাদের ২০১৮ সালে যে হলফনামা দাখিল করেছেন সেখানে তিনি তার আয়কর সনদও দিয়েছিলেন। তাতে দেখা যায়, তার মোট বাৎসরিক আয় ছিল ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৬৫১ টাকা। আর মধ্যে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা তিনি মন্ত্রীর বেতন-ভাতা হিসেবে পেয়েছেন আর ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫১ টাকা পেয়েছেন বই লেখার রয়্যালটি বাবদ।

অন্যদিকে তার একটি রোলেক্স ডে ডেট ঘড়ির দামই ২৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। আবার তার দাখিল করা হলফনামা বা আয়কর সনদে এই দামি হাতঘড়িটির বা অন্য ঘড়িগুলোর কোনো উল্লেখই নেই, যার মাধ্যমে নির্বাচনী বিধিমালা আর আয়কর আইনের লঙ্ঘন করেছিলেন। প্রতিটি নির্বাচনের হলফনামায় লুকিয়ে ছিলেন শখের হাতঘড়িগুলো। এআরএস

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- Payra Team