নিজস্ব প্রতিবেদক: নেচে-গেয়ে উল্লাস করতে করতে চট্টগ্রাম নগরীতে শাহাদাত হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা তিনজনই নিহত শাহাদাতের বন্ধু বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে রাত ১২টার দিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানাজানি হলেও পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের নাম বলতে রাজি হয়নি।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘তিনজন গ্রেপ্তারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’
সম্প্রতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একদল যুবক ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গানটির সঙ্গে নেচে নেচে উল্লাস করছেন। একই সঙ্গে দুই হাত খুঁটিতে বেঁধে এক যুবককে পেটাচ্ছেন। মার খেয়ে ভুক্তভোগী যুবকের মাথা ঢলে পড়ে এবং একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন।
এদিকে শাহাদাতকে হত্যার পর তাঁর স্ত্রীকেও মেরে ফেলার হুমকি দেন খুনিরা। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেননি তিনি। শাহাদাতের স্ত্রী শারমিন অন্তঃসত্ত্বা।
ঘটনাটি ঘটে ১৩ আগস্ট। ওই সময় থানা প্রায় পুলিশশূন্য ছিল। এই সুযোগ নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনের ছদ্মবেশে কয়েকজন এ হামলায় অংশ নেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তথ্যমতে, শাহাদাত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়াজান ভুঁইয়াবাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। তবে পরিবার নিয়ে শাহাদাত নগরীর কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন। গত ১৪ আগস্ট নগরের প্রবর্তক মোড়ের পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে থেকে পুলিশ শাহাদাতের মরদেহটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগী শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে দেওয়া তথ্যমতে, গত ১৩ আগস্ট বেলা ২টার দিকে কাজের জন্য বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যার দিকে তাঁর স্ত্রী শারমিন ফোন করলে তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরেও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাঁকে ফোন করেন শারমিন। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এর পরদিন শাহাদাতের চাচা সকাল ৯টার দিকে ফেসবুকে দেখেন, নগরীর প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনা শাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তাঁর ভাতিজার মরদেহ পড়ে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শাহাদাতকে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকায় দেশজুড়ে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। জড়িত কয়েকজনের মধ্যে তিনজন লালখান বাজার এলাকার সোর্স দুলালের ছেলে সাগর, ২ নম্বর গেটের ইয়াছিন ও শান্ত চিহ্নিত হয়েছে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাগর নিহত শাহাদাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সাগরের কাছে শাহাদাতের ৫ হাজার পাওনা টাকা নিয়ে হত্যাকাণ্ডের আগে বিরোধ হয়। শাহাদাত পাওনা টাকা চায় সাগরের কাছে। এ কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহাদাতের পরিবারের সদস্যরা।
একে