আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহর (লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধার দল) বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত তারা এখনও নেয়নি। সেই সম্ভাব্য সামরিক অভিযানগুলোর ধরন কী হতে পারে তাও প্রকাশ করেনি। গত সপ্তাহে যদিও, ইসরায়েলের নর্দান কমান্ডের প্রধান লেবাননে স্থল অভিযানের পক্ষে কথা বলেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে এমনটি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এপি।
এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধের ভয়াবহতা কিছুটা কমে যাওয়ায়, লেবানন সীমান্তে সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি বাড়িয়েছে ইসরায়েল। সেখানে হাজারো সেনাসহ একটি শক্তিশালী ব্রিগেড মোতায়েন করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গত সপ্তাহে যুদ্ধের একটি ‘নতুন পর্ব’ শুরু করার ঘোষণা দেন কারণ ইসরায়েল তার দৃষ্টি এখন হিজবুল্লাহর ওপর দিয়েছে। যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল গাজা থেকে উত্তর দিকে সরে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
২০০৬ সালের যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি সই হয়েছিল। সেখানে হিজবুল্লাহকে সীমান্ত থেকে ২৯ কিলোমিটার (১৮ মাইল) দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হয়। তবে ইসরায়েল বেশ কিছু শর্ত মেনে চলছে না এমনটি উল্লেখ করে হিজবুল্লাহ তা অমান্য করতে থাকে। ইসরায়েল এখন হিজবুল্লাহকে সীমান্ত থেকে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার (পাঁচ থেকে ছয় মাইল) দূরে সরিয়ে নেওয়ার দাবি করছে যা হচ্ছে হিজবুল্লাহর আয়ত্বে থাকা অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত করার সক্ষমতা।
হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা দুই ইসরায়েলি সৈন্যকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার জেরে শুরু হয় ২০০৬ সালের যুদ্ধ যা একমাস অব্যাহত ছিল। তখন দক্ষিণ লেবানন ও বৈরুতে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ এবং দক্ষিণে স্থল অভিযান চলে।
অভিযানের কৌশল এবং উদ্দেশ্য বলতে গিয়ে ইসরায়েলি কমান্ডাররা পরে বলেন, হিজবুল্লাহর রকেট ছোড়া এবং আক্রমণ নির্মূল করতে সশস্ত্র বাহিনীটির অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে সর্বোচ্চ ক্ষতি করা হয়।
কিন্তু ইসরায়েলের এবার আরও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য থাকতে পারে: সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের পিছনে ঠেলে দেওয়ার জন্য দক্ষিণ লেবাননের একটি বাফার জোন দখলে নেয়া।
সর্বাত্মক যুদ্ধে শঙ্কা: আশঙ্কা করা হচ্ছে, নতুন এই যুদ্ধটি ২০০৬ সালের যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।
যুদ্ধে তখন হিজবুল্লাহর শত শত যোদ্ধা এবং লেবাননের আনুমানিক এক হাজার ১০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। দক্ষিণের বিশাল অংশ এমনকি বৈরুতের কিছু অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেই যুদ্ধে ১২০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং শতাধিক আহত হয়। ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী শহরগুলোতে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কয়েক ডজন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়।
ইসরায়েল অনুমান করছে, হিজবুল্লাহর কাছে এখন প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যার মধ্যে কিছু নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এগুলোর অনেকগুলো আঘাতের সীমার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের অধিকাংশ শহর।
ইসরায়েল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করেছে। তবে এসব কিছু নতুন যুদ্ধকে ফের ভয়াবহ হয়ে উঠা থেকে বিরত রাখবে কী না তা এখনও স্পষ্ট নয়।
হিজবুল্লাহ সীমান্তে রকেট, অস্ত্র এবং অস্ত্রধারী বাহিনী জমায়েত করলে ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে গোটা দক্ষিণ লেবাননকে রণক্ষেত্রে পরিণত করা হতে পারে। বিগত মাসগুলোতে একাধিক উচ্চ পর্যায়ের বক্তৃতায়, ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে গাজার মতো লেবাননেও একই রকমের ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হতে পারে।