শুক্রবার | ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শান্তি মিশন থেকে ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল নির্জনের

পায়রানিউজ ডেস্ক: আগামী ডিসেম্বরে শান্তি মিশনে যাওয়ার কথা ছিল নির্জনের। সেখান থেকে এসে বিয়ে করবে বলেও জানিয়েছিল। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর আগেই আমার শ্যালক পরপারে চলে গেল।

কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনাকালে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জনের ভগ্নিপতি এনামুল হক।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। খুনিদের ফাঁসি চাই।

ভাই নির্জনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বড় বোন সুচি বেগম। কাঁদছেন হাউমাউ করে। স্মৃতি রোমন্থন করে বলছেন, প্রতিদিন দু-একবার করে ও আমাকে ফোন দিত। কেমন আছি, ও কেমন আছে, এমন কথাই হতো বেশি। দেশ এবং পরিবার নিয়ে ও অনেক পরিকল্পনা করত। ঘটনার দিনও রাত সাড়ে ১০টার দিকে ও আমাকে কল দেয়। এ সময় বলে, আপু, একটা অপারেশনে যাচ্ছি বড় একটা ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে। এরপর বলে, সামনেই তো আমার জন্মদিন, কী দিবা আপু। আমি সেদিন ছুটিতে আসব। কিন্তু সেই দিনটা আর এলো না। তার আগেই সব এলোমেলো হয়ে গেল।

কাঁদতে কাঁদতে সুচি আরও বলেন, নির্জন আমার মেয়ে সারাকে শান্তি মিশন থেকে এসে একটা আইফোন কিনে দেবে বলেছিল। ভাগ্নিকে আর ফোন কিনে দেওয়া হলো না তার।

একমাত্র ছেলে নির্জনকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা নাজমা আক্তার। বিলাপ করে বলছেন, ও আমার আত্মা ছিল। ও যখন অপারেশনে যায়, বলেছি তুমি দেশের জন্য ও দশের জন্য করিও। যেটি ভালো হয় সেটি দেখেশুনে করিও।

একই অবস্থা বাবা সারোয়ার জাহানেরও। ছেলেকে হারিয়ে তিনি প্রায় বাকরুদ্ধ। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এ রকম মৃত্যু যেন আর কারও না হয়। আর যেন কোনো বাবার এভাবে আর্তনাদ করতে না হয়। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই।

এর আগে, মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তানজিম সারোয়ারের মরদেহ কক্সবাজার থেকে হেলিকপ্টারে টাঙ্গাইল হেলিপ্যাডে এসে পৌঁছায়। এরপর মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।

পরে আসরের নামাজের পর গ্রামের বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে তানজিমকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার আগে নিহত সেনা সদস্যকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিপুলসংখ্যক মানুষ জানাজায় অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার অন্তর্গত ডুলাহাজরা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল দ্রুত সেখানে যায়। আনুমানিক ৪টার দিকে মাইজপাড়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করার সময় সাত থেকে আট সদস্যের একটি ডাকাত দল সেনা টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার ডাকাত দলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা লেফটেন্যান্ট তানজিমের ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তানজিমকে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জন টাঙ্গাইল জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী এ তরুণ সেনা কর্মকর্তা পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে (গত ৮ জুন ২০২২) আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন।

একে

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- Payra Team