রবিবার | ১১ মে, ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ, ১৪৩২

কেনো পদত্যাগ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা?

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কের পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৭ সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন। একের পর এক তারা কেনো পদত্যাগ করছেন তা নিয়েই নানা প্রশ্ন উঠেছে।

সাভার প্রতিনিধি জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করা পদত্যাগের কারণ হিসেবে তারা কতিপয় সমন্বয়কের বিতর্কিত কার্যক্রম, ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিলের প্রচেষ্টা, সরকারি দলের মতো আচরণ ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট-বিরুদ্ধ কাজের অভিযোগের কথা তুলে ধরেছেন। পদত্যাগ করা সমন্বয়কেরা হলেন- আব্দুর রশিদ জিতু, রুদ্র মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, হাসিব জামান, জাহিদুল ইসলাম ইমন, জাহিদুল ইসলাম, ফাহমিদা ফাইজা, রোকাইয়া জান্নাত ঝলক, মিশু খাতুন, রাফিদ হাসান রাজন, হাসানুর রহমান সুমন, আব্দুল হাই স্বপন, নাসিম আল তারিক ও ঐন্দ্রিলা মজুমদার। সহসমন্বয়কেরা হলেন জিয়া উদ্দিন, তানজিম আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তী সময় ৯ দফার ওপর ভিত্তি করে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্যাসিবাদের পতনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তবে ৯ দফায় অন্তর্ভুক্ত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের দাবিগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একপ্রকার নিশ্চুপ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের মতো ভূমিকা পালন করছে।’

তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া বাংলাদেশের সর্বস্তরের আন্দোলনকারীদের একই ব্যানারে অন্তর্ভুক্ত করতে ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আমরা মনে করি, এই ব্যানার এখনো বজায় থাকা আন্দোলনে সর্ব পেশার, সর্বস্তরের ও সর্ব দলের মানুষের অংশগ্রহণের ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে। তাই এই ব্যানার যত দ্রুত সম্ভব বিলুপ্ত করে দিতে হবে।’

আবদুর রশিদ আরও বলেন, ‘জাবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় সমন্বয়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে অক্ষমতা, সহযোদ্ধাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সন্ত্রাসী শামীম মোল্লার গণপিটুনির পর পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে একাধিক সমন্বয়কের নাম উঠে আসার ব্যাপারে ব্যানার কোনো ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসতে না পারায় আমরা সমন্বয়ক পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করছি।’

তিনি মনে করেন, গত ৫ আগস্টে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা সর্বস্তরের, সর্ব পেশার ও সর্ব মতের। কেউ আন্দোলনের একক কৃতিত্বধারী নন। একইসঙ্গে সহস্রাধিক শহীদ, আহত ব্যক্তিদের রক্ত ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিসর্জনের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ শুধু একটি গোষ্ঠীর নয়; বরং সবার। তিনি বলেন, ‘গণমানুষের মেহনত, ঘাম ও রক্তের ফসল এই দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে সমুন্নত করতে এবং এর স্পিরিটকে লালন করতে যার যার জায়গা থেকে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।’ উল্লেখ্য, গত ১৩ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

চবিতে ৫ সমন্বয়কের পদত্যাগ

সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচজন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন। তবে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সমন্বয়কদের আহ্বানে ছাত্রদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে থাকবেন বলে জানান তারা। ১৬ আগস্ট বিকেল ৫টায় চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা পদত্যাগের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান। পদত্যাগকারীরা হলেন- সমন্বয়ক সুমাইয়া শিকদার, সহ-সমন্বয়ক আল মাসনুন, ধ্রুব বড়ুয়া, ঈশা দে ও সাইদুজ্জামান রেদোয়ান।

লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, বৈষমাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটালেও পরে নানা সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে সমন্বয়করা জবাবদিহিতা করছে না এবং নানা ধরনের সাফাই দিচ্ছেন যা অনেকাংশেই এক পাক্ষিক। প্রথম থেকেই যেসব সমন্বয়হীনতা ও অপরাজনীতির আভাস পেয়েছি, আমরা সেগুলোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি।

তারা আরও বলেন, প্রক্টর ও প্রভোস্টদের পদত্যাগের যৌক্তিকতা ও অযৌক্তিকতা বিষয়ে নানা ধরনের বিতর্ক উঠে আসছিল। আমরাও তাদের পদত্যাগ চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা ধাপে ধাপে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আগমন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সব প্রকার লেজুড়বৃত্তিক ও দখলদারি দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের ব্যবস্থা করেই যেন ভিসি পদত্যাগ করেন। কিন্তু কোনো মতামতকে যাচাই-বাছাই না করেই সমন্বয়করা ক্যাম্পাসের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে ফেলে। শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে সমালোচনার সঠিক কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।

তারা আরও বলেন, আন্দোলনের সময়ে চবির সমন্বয়ক সংখ্যা ছিল ২২ জন। কিন্তু পরে ৫ আগস্ট চবিতে সমন্বয়ক সদস্য সংখ্যা হয় ৩০ জন। নতুন যে কয়জন কমিটিতে যুক্ত হয়েছে তাদের বিষয় নিয়েও মূল সমন্বয়করা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এসব ঘটনা আমাদের মনে স্বাভাবিক প্রশ্নের জন্ম দেয়। ক্যাম্পাস সংস্কারের কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তারা তৎপর নন, প্রভোস্টদের পদত্যাগ না করিয়ে হলে শিক্ষার্থীদের উঠানোর ব্যাপারে আরও ভালো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারতেন।

তাই আমরা নিজ নিজ সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি। আগামীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যেসব কর্মসূচি পালন হবে তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমরা সবসময় ছিলাম এবং আগামীতেও থাকবো।

সংবাদ সম্মেলনে নিজদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি তুলে ধরে পদত্যাগকারী সহ-সমন্বয়ক আল মাশনুন বলেন, সমন্বয়কদের কাজ হলো সব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাবে। তবে সমন্বয়করা সেটা না করে চট্টগ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে। আজও চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আলোচনা সভা ছিল, আমরা সেটা বর্জন করেছি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা আলোচনা করেনি।

পদত্যাগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, সমন্বয়ক হিসেবে আমাদের আর থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যেহেতু আমাদের আন্দোলন শেষ, দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে, তাই আমাদেরও দায়িত্ব শেষ। আমরা সমন্বয়ক হিসেবে আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে থাকতে চাই না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সমন্বয়কদের আহ্বানে ছাত্রদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা থাকবো।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, আমরা সব সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই নিয়ে আসছি, এখনও নিচ্ছি। এখানে সবকিছুই পরিষ্কার। কেউ ব্যক্তিগত অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগ করলে আমরা জোর করতে পারি না। সমন্বয়ক কমিটিতে অনেকেই নিরাপত্তার জন্য আসতে চায়নি বলে কমিটি দিয়েও আমরা তা বিলুপ্ত করতে বাধ্য হয়েছি। যারা সাহস দেখিয়ে এগিয়ে এসেছে তাদের নিয়ে বর্তমান সমন্বয়ক কমিটি। এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়। আমাদের বিপ্লব চলমান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে কেউ বিরোধিতা করলে আমরা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ জন সমন্বয়কের পদত্যাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ জন সমন্বয়ক নিজেদের মধ্যে মতবিরোধে জড়িয়ে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক স্বর্ণা রিয়া এবং আলী আহম্মেদ আরাফ গত ১৪ অগাস্ট ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে সমন্বয়ক পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান। এরপর শনিবার সকালে ফেইসবুক পোস্ট দিয়ে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মো. নূর নবী। রাতে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মাসুদ রানাও একই সিদ্ধান্ত জানান। আর তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে একই দিনে যৌথ বিবৃতি দিয়ে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন ১৪ জন সমন্বয়ক। তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইউনিটই ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছেন।

এই ১৪ জন হলেন– ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সিয়াম হোসাইন; গণিত বিভাগের অরুণাভ আশরাফ; গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মুজাহিদ বাপ্পি, ইভান তাহসীব ও খাদিজা তুল কুবরা; ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শওরীন হাসান ইরা ও যুবায়ের আহমেদ শাফিন; ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের নাজমুল হাসান ও ফয়সাল মুরাদ; নাট্যকলা বিভাগের কিশোর সাম্য ও মুগ্ধ আনন; মনোবিজ্ঞান বিভাগের কামরুল হাসান রিয়াজ; রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের কাজী আহাদ এবং এইএমএল বিভাগের আপেল আহমেদ।

যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি, সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অথবা আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ব্যতিক্রম নয়। ৫ আগস্টের পর থেকেই অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে, যার দায় এসে পড়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর।

“এই প্ল্যাটফর্ম থেকে এমন অনেক কাজ করা হয়েছে, যার সঙ্গে আন্দোলনকারী ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচিত অনেকেরই কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। আমরা এসব কর্মকাণ্ড প্রত্যাখ্যান করছি। কিছু ঘটনা আমরা উল্লেখ করছি।” বিবৃতিতে বলা হয়, সমন্বয়কদের মধ্যে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই ‘মব ট্রায়ালের মাধ্যমে’ একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে, যার নজির সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আর কোনো ইউনিটে নেই। “সমন্বয়কদের আবার উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রয়োজন পড়ল কেন? আর কাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে এই উপদেষ্টা পরিষদ? সুযোগসন্ধানী শক্তির উপদেষ্টা পরিষদ আমরা কখনোই সমর্থন করিনি।”

সমন্বয়ক নূর নবীর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলার অভিযোগ তুলে বিবৃতিতে বলা হয়, “১৫ অগাস্ট রাতে ক্যাম্পাসে সমন্বয়ক নূর নবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ ব্যাচের এক শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলেন।… যেখানে সারা দেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহ্বান করা হয়েছে কোনো প্রকার সহিংসতায় না জড়াতে, সেখানে একজন সমন্বয়কের এমন আচরণ কোনোভাবেই আন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না বলে আমরা মনে করি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও অন্যতম সমন্বয়ক মাসুদ রানার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ‘রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ও স্বেচ্ছাচারিতা’ ছিল মন্তব্য করা হয়েছে বিবৃতিতে। ওই ১৪ জন বলছেন, “সমন্বয়কদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই ছাত্রলীগের অনুগতদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন ও নতুন কমিটি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত মাসুদ রানার ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে কি না, আমরা সেই প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি।”

দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হল উদ্ধার আন্দোলন’ একটা আত্মঘাতী কর্মসূচি ছিল বলে মনে করছেন বিবৃতিদাতা ১৪ শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, “এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার স্থানীয় ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়।”

পাবিপ্রবিতে ২৫ সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বকের পদত্যাগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ছয়জন সমন্বয়ক ও উনিশ জন সহ-সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন। ১৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে এই ঘোষণা দেন পাবিপ্রবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মিরাজুল ইসলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করাও এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পাবিপ্রবি সমন্বয়কদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান অভিযোগ তুলছেন। সমন্বয়ক হিসেবে আমরা এই পর্যন্ত আমরা এখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে কোন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করিনি। এরপরেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেহেতু আমাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সেহেতু আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর সমন্বয়ক হিসেবে থাকতে চাচ্ছি না। এখন থেকে পাবিপ্রবিতে সমন্বয়ক পরিচয়ে আর কেউ থাকবে না, সবাই সাধারণ শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ভালো খারাপ দেখভাল করবে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বয়কদের অনেকেই নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় আলাদা ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা সমন্বয়করা শুনছে না। সে জন্য তারা সমন্বয়কদের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM