বুধবার | ১৪ মে, ২০২৫ | ৩১ বৈশাখ, ১৪৩২

নবগঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি বাতিল ও সকল ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নবগঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি বাতিল ও সকল ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।

৫ অক্টোবর শনিবার তারা এ দাবি জানান।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। এ প্রসঙ্গে ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা জনাব আসিফ নজরুল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ করে বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা শুধু নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সেটা ছিল একটা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্ন এবং প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। বাংলাদেশে যেন আর কোনোদিন, কখনও যেনো ফ্যাসিবাদী শাসন জাঁকিয়ে বসতে না পারে, সেটা রোধ করতে কী কী সংস্কার প্রয়োজন সে লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কমিশন কাজ করবে বলে তিনি জানান। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের পরামর্শ সংস্কার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তারা বলেন, সংস্কার কমিশনের কর্মপদ্ধতির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজুল আলম বলেন, দেশের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদী শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ ছিল। এখন জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি যেমন আছে, তেমনি গত ১৫ বছরে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো জনগণের স্বার্থে কাজ করতে পারছে না। এগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা আরোও বলেন, জনবান্ধব রাষ্ট্র গঠনে ক্যাডার বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ৩১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আপনাদের মাধ্যমে জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলাম। পরবর্তীতে সকল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের সাথে সাক্ষাৎকারের জন্য আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ লিখিত আবেদন জানায়। ইতোমধ্যে পাঁচজন সম্মানিত উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। কেমন জনপ্রশাসন হওয়া উচিত- দীর্ঘদিন সিভিল প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতায় আমরা উপদেষ্টামণ্ডলীর সামনে লিখিতভাবে উপস্থাপন করি এবং সকলেই আমাদের দাবিকে যৌক্তিক বলে মতামত প্রদান করেন। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ইতোপূর্বে জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছিলো, সেগুলো তাঁদের দিয়েই করা হয়েছিলো, যারা নিজেদের সুবিধার্থে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করেছেন।

তারা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করলাম ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ যে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, সেখানে ২৫টি ক্যাডারের কোনও সদস্য নেই। বরং কমিশন প্রধানসহ ছয়জন সদস্য একটি ক্যাডারের, যারা সিভিল প্রশাসনের বৈষম্য সৃষ্টিকারী। এছাড়া ইতোপূর্বেও বৈষম্য নিরসনে তাঁদেরকে দিয়েই কমিটি গঠিত হয়েছিলো, এবং তাঁরা সেই সুযোগে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করেছেন।

যদিও কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ নামে এ কমিশন গঠন করল। কিন্তু ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ মনে করে, বৈষম্যপূর্ণ এ কমিশন কোনোভাবেই বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে না বরং বিদ্যমান সিভিল প্রশাসন আরও গণবিরোধী হবে। তাই, পরিষদ এ কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করছে এবং সকল পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্তি করে পুনর্গঠন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

তারা বলেন, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ দেশের ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে ২৫টি ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ২৫টি ক্যাডারে প্রায় ৫৩ হাজার কর্মকর্তা চাকরি করেন। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, জনসেবা এ ২৫টি ক্যাডারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই ২৫টি ক্যাডারকে পাশ কাটিয়ে শুধু একটি ক্যাডারের প্রতিনিধি দিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার সম্ভব নয়। তাই আমরা প্রস্তাব করছি-
১. বিদ্যমান জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে।
২. আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মাধ্যমে সকল ক্যাডারের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সিভিল সার্ভিসের বাইরে জনপ্রশাসন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞকে কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতে হবে।

সবশেষে বলেন, আমরা আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী ও সরকারের কাছে এ দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরছি। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আমরা রাজপথে নামতে চাই না। কিন্তু সরকারকে বুঝতে হবে আমরা দেশের মোট ৯০-৯২ ভাগ ক্যাডার কর্মকর্তার প্রতিনিধিত্ব করি। তাই আমাদের উপেক্ষা করা হলে পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ দায়ী থাকবেন, যা সরকারের জন্য স্বস্তিকর হবে না।

এআরএস

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM