জেলা প্রতিনিধি, শেরপুর: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যায় আরও দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বন্যায় এ উপজেলায় গত দুদিনে পাঁচজনের মৃত্যু হলো। সর্বশেষ মারা যাওয়া দুজন হলেন- উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে হাতেম আলী (৩০) ও আলমগীর হোসেন (১৬)। এর আগে গত শুক্রবার মারা যান তিনজন।
স্থানীয় ইউপি সদস্যের বরাত দিয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে অভয়পুর গ্রামে বন্যার পানির স্রোতে পড়ে যায় আলমগীর। এ সময় ছোট ভাইকে বাঁচাতে গেলে হাতেম আলীও স্রোতে ভেসে যান। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ ছিলেন। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে পাশের এলাকা কুতুবাকুড়া গ্রামে পানিতে দুই ভাইয়ের মরদেহ ভেসে ওঠে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন- নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবীল ইউনিয়নের ইদ্রিস আলী (৬৫), পোড়াগাঁও ইউনিয়নের জহুরা খাতুন (৭০) ও বাঘবেড় ইউনিয়নের অমিজা খাতুন (৪৫)।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা জানান, বন্যায় শুক্রবার তিনজন এবং শনিবার দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত আছে। আক্রান্তদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হচ্ছে।
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও নালিতাবাড়ী উপজেলায় পানি বেড়েছে। এতে শনিবার (৫ অক্টোবর) নতুন করে কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত নালিতাবাড়ীর বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বন্যায় বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। আক্রান্ত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হয়েছেন সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিপাত এবং মহারশী ও ভোগাই নদীর বিভিন্ন জায়গায় পাড় ভেঙে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। একইসঙ্গে ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ১৯ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম।
এর মধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলার ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন, মালিঝিকান্দা ও নলকুড়া ইউনিয়ন এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়ন, নয়াবীল, পোড়াগাঁও, বাঘবেড়, রামচন্দ্রকুড়া, কলসপাড়, মরিচপুরান, নালিতাবাড়ী, রাজনগর, রূপনারায়নকুড়া, যোগানিয়া, কাকরকান্দি সবকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে।