শনিবার | ৭ জুন, ২০২৫ | ২৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

মাথা ন্যাড়া করে ভারতে পালানোর সময় সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ: ভারতে পালানোর সময় সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে গ্রেফতার করেছে বিজিবি। রোববার রাতে বিজিবির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বিজিবি জানায়, অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের সাবেক এমপি নারায়ন চন্দ্র চন্দকে আটক করা হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কিছু দিন পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যু হলে তিনি ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

নারায়ন চন্দ্র চন্দ খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৯৪৫ সালের ১২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কালীপদ চন্দ ও মাতার নাম রেণুকা বালা চন্দ। নারায়ন চন্দ্র উলাগ্রামের পাঠশালায় তার শিক্ষাজীবন শুরু করে বান্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৬১ সালে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক্যুলেশন পাশ করেন। ১৯৬৩ সালে দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৬৭ সালে একই বিষয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন। চাকুরীকরাকালীন সময়ে ১৯৭২ সালে তিনি বিএড পাশ করেন

নারায়ন চন্দ্র চন্দ ডুমুরিয়ার সাহস নোয়াকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের ৭ মে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ২০০৫ সালের ১১ মার্চ চাকরি থেকে অবসর নেন। ৯৬৮ সালে নারায়ন চন্দ্র চন্দ মাধ্যমিক শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ করতে প্রতিষ্ঠা করেন থানা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। তিনি প্রতিষ্ঠাকালিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৭ সালে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন।
নারায়ন চন্দ্র চন্দ ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের ডুমুরিয়া থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৮৪ সালে তিনি ডুমুরিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০০৩ সালে গঠিত কমিটিতেও তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন।
তিনি খুলনা-৫ আসনের ২০০০ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম, ২০১৮ সালের একাদশ ও ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।তিনি আওয়ামী লীগ খুলনা জেলা শাখার সদস্য। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় আহবায়ক ছিলেন।নারায়ন চন্দ্র চন্দ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। ছয় মেয়াদে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য, তৎকালিন স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও পরে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সালাহউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর ২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে নারায়ন চন্দ্র চন্দ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চারদলীয় জোট সমর্থিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মিয়া গোলাম পরোয়ারের নিকট পরাজিত হন।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও খুলনা-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে খুলনা-৫ আসন থেকে তৃতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ২ জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও ২ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ৭ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি খুলনা-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নারায়ন চন্দ্র চন্দের স্ত্রী একজন স্কুল শিক্ষিকা। তাঁদের তিন পুত্র ও এক কন্যা। জ্যেষ্ঠ পুত্র বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অনারারী সদস্য। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক এবং পূর্বে পরপর দুই মেয়াদে ডীন ছিলেন। দ্বিতীয় পুত্র ব্যবসায়ী ও কনিষ্ঠ পুত্র খুলনা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর জামাতা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম ছিলেন।

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM