বুধবার | ৪ জুন, ২০২৫ | ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

নতুন নোট ছাপানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আলোচনা শুরু

নিউজ ডেস্ক: ঈদ সামনে রেখে নতুন নোট ছাপানো এবং নোটের মজুদ বাড়ানোর আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এর অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে নতুন নোট ছাপানোর প্রস্তাবও সরকারকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।

বর্তমানে বাজারে থাকা বিভিন্ন মূল্যমানের নোট একই নকশায় ছাপতে, বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া আগের নোট ছাপাতে কিংবা নতুন নকশায় নোট ছাপতে কত খরচ ও সময় লাগবে, তার তুলনামূলক তথ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছাড়া নোট ছাপার কাজ শুরু হবে।

আগামী ঈদ পর্যন্ত কী পরিমাণ নোটের চাহিদা থাকতে পারে তা নিয়ে মঙ্গলবার ওই বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কমিটি। আর অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন নকশায় নোট ছাপানোর বিষয়ে আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, “বাজারে ছোট আকারের নোটের চাহিদা আছে। আগামী ঈদের সময়ে নতুন টাকার নোট লাগবে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মুদ্রা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক হয়েছে। নোটের নকশা নিয়ে সিদ্ধান্ত সরকার নেবে।”

গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে দুই মাস পূর্ণ করেছে। টাকা থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে গত কয়েক দিন ধরেই।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, নতুন নকশায় নোট ছাপতে কী পরিমাণ সময় ও অর্থ লাগবে তা নিয়ে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ও ডিজাইন অ্যাডভাইজরি কমিটি। আরেকটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে পুরনো নকশায় নতুন করে নোট ছাপানোর বিষয়ে।

গত ১৫ বছরে বাজারে ছাড়া সব মানের নোট ও কয়েনে বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। তবে পুরনো নকশার কিছু নোট এখনো বাজারে আছে যাতে বঙ্গবন্ধুর ছবি নেই।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিসহ নোট বাজারে আনলেও পুরনো নকশার নোট বাতিল করেনি আগের আওয়ামী লীগ সরকার। সময়ে সময়ে তা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত নোট ছাপানোর পর একই মূল্যমানের ছবি ছাড়া নোট আর ছাপানো হয়নি। ফলে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া নোট এখন বাজারে আছে যৎসামন্য।

প্রতিবার নতুন নোটের নকশা অনুমোদন হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী পুরনো নকশা ও প্লেট নষ্ট করে ফেলেছে সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস বা টাকশাল।

যেভাবে ছাপা হয় নতুন নোট

বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপানোর কাজটি করে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড, যা টাকশাল নামে পরিচিত। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা পেলেও ১৯৮৮ সালের জুন মাসে এক টাকা ছাপানোর মধ্য দিয়ে এ প্রেসের নোট ছাপানো শুরু হয়।

ওই বছরের নভেম্বর মাসে ১০ টাকার নোটও ছাপানো হয় সেখানে। প্রতিটি নোট ছাপানোর আগে এর নকশা অনুমোদন করে সরকার। সেজন্য দরপত্র ডেকে চিত্র শিল্পীদের দিয়ে নোটের নকশা করানো হয়।

নকশা চূড়ান্ত হলে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কাগজ, কালি ও প্লেট তৈরি করা হয়। নকশা অনুযায়ী বিদেশ থেকে প্লেট তৈরি করে আনার পর ছাপার কাজটি করে টাকশাল।

জানতে চাইলে টাকশালের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে নতুন করে নোট ছাপতে গেলে দুটো কাজ করা যায়।

সরকার যেহেতেু কোনো নোট বাতিল বা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়নি, সেহেতু যে মূল্যমানের নোট ছাপানো হবে, তা পুরনো নকশায় ছাপানো যায়।

সেক্ষেত্রে নকশা যেহেতু অনুমোদন করা আছে, নতুন করে প্লেট বানিয়ে নিয়ে এলেই ছাপানো শুরু করে দেওয়া যাবে।

আর সরকার যদি নতুন নকশায় টাকা ছাপাতে চায়, তাহলে দরপত্র দিয়ে নোটের নকশা তৈরি, যাচাই-বছাই, নিরাপত্তা ইস্যু নিস্পত্তি করে ছাপার প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ। সেক্ষেত্রে সময় ও খরচ দুটোই বাড়বে।

এ পক্রিয়ায় টাকা ছাপতে গেলে ১৮ থেকে ২০ মাসের মত সময় লাগবে। আর পুরনো নকশায় ছাপালে সেটা ছয় মাসের মধ্যে সম্ভব বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় টাকা ছাপায় না। সাধারণত একটি নোট ৪-৫ বছর চলে। এরপর তা পুনঃমুদ্রন করা হয়। ছোট মানের নোট বেশি হাতবদল হওয়ায় তা দ্রুত নষ্ট বা ব্যবহার অনুপযোগী হয়।

বছরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা মুদ্রণ বা উৎপাদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রেখে দেওয়া হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী সেখান থেকে যখন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বাজারে ছাড়া হয়, তখনই তা মুদ্রা বা টাকায় পরিণত হয়। তার আগে সেটা টাকা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি সার্কুলেশন প্রতিবেদনে যোগ করা হয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে নতুন নোট ছাপতে। তার আগের অর্থবছরে খরচ ছিল ৩৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।

সবশেষ নতুন নকশায় ২০০ টাকার নোট চালু হয় ২০২০ সালে। ওই নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবিতে নতুন রূপ দেওয়া হয়।

আগে ছাপানো নোটে ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে আরো স্পষ্ট করে দুই ধরনের ছবি ব্যবহার করা হয় ২০২০ সাল থেকে। এরপর ছাপানো সব নোটে ওই দুই ধরনের ছবিই ব্যবহার করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া সবশেষ নোট ছাপা হয়েছিল ২০০৯ সালে। তখন গভর্নরের দায়িত্বে থাকা সালেহ উদ্দিন আহমেদ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। ওই সময় ছাপা লাল রঙের ৫০০ টাকা এবং এক হাজার টাকার কিছু নোট এখনো দেখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, টাকায় ছবি থাকা বা না থাকার বিষয়টি সরকারের রাজনৈতিক দর্শনগত বিষয়।

“মুদ্রা বা টাকার মূল্যমান দেখা হয় নোটের আর্থিক সক্ষমতার দিক দিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে নোটকে এক হাজার বা ৫০০ টাকা বলে বাজারে ছাড়বে, তা দিয়ে এক হাজার বা ৫০০ টাকার পণ্য কেনা যাবে। সেখানে ডিজাইন বিষয় না। জনগণ তা গ্রহণ করলে বাজারে চলবে।”

সূত্র: বিডিনিউজ ২৪

এমএফ

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM