শুক্রবার | ২৩ মে, ২০২৫ | ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

একম ইঞ্জিনিয়ারিং দখল ও সিটি সেন্টার নির্মাণে ভয়ঙ্কর প্রতারণা ওবায়দুল করিমের

নিজস্ব প্রতিবেদক: শুধু বেলহাসা নয়, প্রতারণা করে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান একম ইঞ্জিনিয়ারিং দখল করেন ওবায়দুল করিম ও তার ছেলে সালমান করিম। নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ২০০২ সালে বিএনপি’র নেতা শাহ্‌ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের ছোট ভাই শাহ একেএম মুজিবুল হক ও ওবায়দুল করিম যৌথভাবে একম ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন। কোম্পানিটির অংশীদারিত্বের শেয়ার ছিল ওবায়দুল করিম ৫০ শতাংশ, একেএম মুজিবুল হক ৪০ শতাংশ ও রবিউল ইসলাম ১০ শতাংশ।

এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, ইমারত ও বিল্ডিং নির্মাণ কাজ করতো। প্রতিষ্ঠানটি মতিঝিল সিটি সেন্টার, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টার, সোনারগাঁও হোটেল সংস্কার, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণ করেন। ২০০২ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তারা সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বদলে যান ওবায়দুল করিম। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কোম্পানিটির অন্যতম অংশীদার মুজিবুল হককে বিএনপি নেতার ভাই পরিচয় দিয়ে নানা মুখরোচক খবর প্রচার করতে থাকেন। পরে কৌশলে মুজিবুলকে সন্ত্রাসী মদতদাতা বিএনপি নেতা সাজিয়ে ভুয়া এজিএম ডেকে তার ৪০ শতাংশ শেয়ার প্রতারণা করে লিখে নেন ওবায়দুল করিম।

এ বিষয়ে মুজিবুল হক ২০১০ সালের ২৫শে এপ্রিল গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি নং-২৩৮৮/১০। পরে মামলা করতে গেলেও তার মামলা নেয়া হয়নি। এরপরে উচ্চ আদালতে রিট করেও কোম্পানির শেয়ার রক্ষা করতে পারেননি মুজিবুল হক। যার হাইকোর্ট রিট পিটিশন নং- ১৭১/১০। অভিযোগ রয়েছে, ওবায়দুল করিম ভুক্তভোগী মুজিবুল হককে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দিয়ে একাধিকবার তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছেন। এক পর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন।

ওবায়দুল করিম ও তার পরিবারের সদস্যরা শুধুমাত্র যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওয়ার নির্মাণ প্রকল্পেই নয়, অনিময় করে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছেন সিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পেও।  ঢাকার মতিঝিলে ৪১তলা বিশিষ্ট সিটি সেন্টার নির্মাণের সময় ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে লিড কোম্পানি ছিল বেলহাসা। সে সময় বেলহাসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদ আহমেদ বেলহাসার সই জাল করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে পরে সেই ঋণ আর পরিশোধ করেনি ওরিয়ন গ্রুপ।

সিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য ২০০৩ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হয় দুবাই-বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান বেলহাসা একম জেভি লিমিটেডের। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিতে বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেয়ার ছিল ৬০ শতাংশ আর একম ইঞ্জিনিয়ারিং এর ৪০ শতাংশ। আবার একম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিকানায় ওরিয়নের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমের সঙ্গে ব্যবসায়ী মুজিবুল হকের ৪০ শতাংশ শেয়ার ছিল। তবে পরবর্তীতে বেলহাসা কিংবা মুজিবুল হক কাউকে না জানিয়ে ওবায়দুল করিম জালিয়াতি করে ওরিয়ন ল্যাবরেটরিজের নামে শেয়ার হস্তান্তর করে নেন।

চুক্তি ও ব্যাংকিং কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বেলহাসা ও একম জেভি লিমিটেডের নামে সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) থেকে ৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরে শেয়ারধারীদের অজ্ঞাতে ওবায়দুল করিম একাই সিটি সেন্টারের ২২টি ফ্লোর বিক্রি করেন প্রায় ৪৫০ কোটি টাকায়, যার বড় একটি অংশ অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। ভবনটি নির্মাণের পর ২০১৭ সালে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসআইবিএল থেকে দ্বিতীয় দফায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির নামে আবারো ৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়। যা আর পরিশোধ করা হয়নি। এ কারণে চলতি বছরের ৩১শে জুলাই পর্যন্ত বেলহাসা একম জেভি’র খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। বেলহাসার শেয়ারের বিপরীতে ঋণ ও সিআইবিতে মালিকের নাম দেখে হতবাক দুবাইয়ের কোটিপতি ব্যবসায়ী মাজেদ আহমদ বেলহাসাও। ব্যাংক ঋণ নেয়ার সময় বেলহাসার এমডি’র সই জাল করা হয়। এজন্য বেলহাসাও এখন বাংলাদেশে ঋণখেলাপি। এদিকে অন্য শেয়ারধারীদের বঞ্চিত করে ওবায়দুল করিম একাই সিটি সেন্টারটি জবরদখল করে রেখেছেন।

বেলহাসার হয়ে আইনি লড়াই করা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, একমের নাম দেয়া হয় ওরিয়ন গ্রুপ, যেখানে একমের মধ্যে ওরিয়ন গ্রুপ বলতে কোনো শব্দও নেই। তারা বেলহাসার সব সিগনেচার জাল করেছে। একমেরও সব সিগনেচার জাল করেছে। জাল করে ওবায়দুল করিমের ছেলে সালমান করিম ও তার মেয়ের জামাই মেহেদী হাসানকে যুক্ত করেছে। পরে কোম্পানিটা পুরোপুরি নিজে দখল করেছে। বেলহাসার যে শেয়ার হোল্ডিং সেটা মাত্র ৬ শতাংশ করেছে। ৯৫ শতাংশ ওবায়দুল করিম ওরিয়নের সঙ্গে মিলে দখল করে ফেলেছেন। এখানে জালিয়াতি হয়েছে, ক্রিমিনাল অফেন্স হয়েছে, সিভিল অফেন্স হয়েছে। দখল ও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমের মুঠোফোনে ফোন দেয়া হলে তাকে পাওয়া যায়নি। ক্ষুদে বার্তা দিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।

 

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM