মঙ্গলবার | ২৪ জুন, ২০২৫ | ১০ আষাঢ়, ১৪৩২

এতো ত্যাগের পরেও সামান্য ক্ষতিপূরণ না পেলে, যারা মারা গেল, তাদের শহিদ বলে কী লাভ?

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘শরীরের তাজা রক্ত আর অঙ্গ বিসর্জন দিয়ে দেশের পরিবর্তন এনে দিয়েছি, কিন্তু আমরা এখন ক্যামন আছি, সেটা কেউ জানতে আসছে না। এত আহত, এত প্রাণ বিসর্জনের পরেও যদি আমরা সামান্য ক্ষতিপূরণ না পাই, তাহলে যারা মারা গেল, তাদের শহিদ বলে কী লাভ…!’- আক্ষেপ আর হতাশা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন দুই চোখের আলো হারানো ২০ বছর বয়সি তরুণ আজিজুল হক।

আজিজুল নরসিংদীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। ১৮ জুলাই আনুমানিক বিকাল ৫টার দিকে আটটা ছররাগুলি লাগে আজিজুলের দুই চোখে। সেদিন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে এলে, চোখ পরিষ্কার করে শুধু সেলাই দিয়ে ছেড়ে দেন চিকিৎসকরা। পরে ইস্পাহানি চক্ষু হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক জানায়, এসব সার্জারি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করতে হয়। এখন আর কিছুই করার নেই। ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন করে যেসব গুলি বের করা যায়, সেগুলো বের করে দিয়েছে।

তখন চিকিৎসক বলেছেন, ‘চোখের আলো আর ফিরবে না। রেটিনা ছিঁড়ে গেছে।’ চীন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঢাকায় এলে, আজিজুলকে আবার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আনা হয়। সে সময় হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ৩১ নম্বর বিছানায় কথা হয় আজিজুলের সঙ্গে। তিনি এতটাই মানসিক চাপে আছেন যে, এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতেও চাইছিলেন না। পরে বলেন, ‘আপনারা সরকারকে অখুশি করে কিছুই লিখবেন না। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি ফ্রিল্যান্সিং করতাম, তাই দিয়ে বাবা- মাসহ সংসারের খরচ ভালোভাবেই চলে যেত। আর এখন সবকিছু বন্ধ হয়ে আছে।’

হাসপাতালে আজিজুলের সঙ্গে থাকা মা ময়না বেগম বলেন, আমাদের একটাই ছেলে, তাকে ঘিরেই আমাদের যত আশা ছিল। আর এখন ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় ঘুম আসে না, ছেলেও ঘুমায় না, ঠিকমত খায় না; দিনে দিনে ছেলে ক্যামন যেন হয়ে যাচ্ছে। ঠিকমত কথাও বলে না।

আজিজুলের বাবা মো. আলম মিয়া একটা টেক্সটাইল কোম্পানিতে কাজ করতেন। এখন তিনি বৃদ্ধ, কিছুই করেন না। আজিজুলরা তিন ভাইবোন। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, আর আজিজুল আন্দোলনে দুই চোখের আলো হারিয়ে চার দেওয়ালের মাঝে বন্দি জীবনযাপন করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ত্যাগের মূল্যায়ন কে, কীভাবে করল! আমরা তো চিকিৎসা না পেয়ে অসহায় জীবন কাটাচ্ছি; আমাদের তো সান্ত্বনার দুটি কথাও বলতে কেউ এলো না!’

গত শুক্রবারে যোগাযোগ করে জানা যায়, আজিজুল বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা দুই চোখের আলো হারিয়েছি, তারা পরিবারের বা সমাজের যেন বোঝা হয়ে না যাই। আমাদের যেন কাজের বা জীবন যাপনের ভালো কোনো ব্যবস্থা করে দেন-সরকারের কাছে এটাই চাওয়া।’

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM