নিউজ ডেস্ক: সরকারি দামে ডিম কিনতে না পারা, রশিদ না দেওয়া ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানার কারণে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু আড়তদার। এতে সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজধানীর তেঁজগাও ডিমের আড়তে গিয়ে জানা যায়, রোববার রাতে ডিমের আড়তে কাঙ্খিত বেচা-কেনা হয়নি। অনেক আড়তই বন্ধ ছিলো। এই সুযোগে ডিমের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন মহল্লার খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা ক্রেতাদের কাছে এক হালি ডিম ৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। ডজন বিক্রি করছেন ১৯০ টাকা পর্যন্ত।
ডিমের বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ ও বিপণণ বন্ধ রাখার কথা বলছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ আমান বলেছেন, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সরকারিভাবে একটা রেট বেঁধে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা নির্ধারিত দামে ডিম কিনতে পারছি না। এই পরিস্থিতিতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা গাড়ি বন্ধ করে রেখেছি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিমের চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া এখন বাজারে সব ধরনের শাকসবজির দাম চড়া। ফলে চাপ পড়েছে ডিমের ওপর।
তবে প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়াচ্ছেন। করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ীদের আধিপত্যের কারণে ডিমের বাজারে এই অস্থিরতা।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীক একে গোষ্ঠী সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এর সুফল প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা পায় না। ক্রেতাদের বাড়তি দামে ডিম খেতে হয়। বাড়তি মুনাফার টাকা যায় সিন্ডিকেটের পকেটে।
সরকারের নজরদারি এবং আমদানির খবরে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও তা খুব একটা স্থায়ী হবে না বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন: ডিমের দাম এখন কিছুটা কমে আসলেও আবারও বেড়ে যাবে। সরকারের উচিত উৎপাদন পর্যায়ে খরচ কমিয়ে আনতে কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়া। এর পাশাপাশি অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙতে কঠোর হওয়ার পরামর্শ তাদের।
ডিমের দাম বাড়ার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যা একটি বড় কারণ বলছেন তারা। বন্যার কারণে ডিমের সরবরাহ কমেছে বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ এগ প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডিম উৎপাদনে পরিপূরক খাদ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ডিমের উৎপাদন খরচ না কমলে ডিমের দাম কমবে না।
শেষ দু’বছর দেশের বাজারে ডিমের দাম চড়া। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেব বলছে, ২০২২’র শুরু দিকে ডিমের ডজন বাজারে ছিলো ৮০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর কয়েক মাসের ব্যবধানে তা গিয়ে ঠেকে ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকায়। ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে এই ডিমের দাম দেড়শ’ টাকা পার হয়। এরপর আর দাম তেমন একটা কমেনি। সবশেষ চলতি সপ্তাহের শুরুতে ডিম ১৮০-১৯০ টাকা ডজনে গিয়ে ঠেকে।
ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামেও ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তারাও একই রকম দাবিতেই মূলত ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। আড়তে গিয়ে দোকানগুলোও বন্ধ দেখা যায়। তবে ভোক্তাদের দাবি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করেই বিক্রি বন্ধ করে রেখেছেন। আড়তের ভেতরে প্রচুর ডিম মজুত করে রেখে কৃত্রিম এই সংকট তৈরি করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
ডিমের বাজারে অভিযান চালিয়ে অনিয়ম পেয়েছে ভোক্তা অধিদফতর। জরিমানা করা হয় একাধিক ব্যবসায়ীকে।
গত সেপ্টেম্বরে ডিমের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে আমদানির অনুমতি দেয় তৎকালীন সরকার। এরপর দাম বেঁধে দেওয়া হয়। সে প্রেক্ষিতে খুচরায় ডিম বিক্রি হওয়ার কথা প্রতি পিস ১১ টাকা ৮৭ পয়সায়। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। প্রতি পিস ডিমের জন্য ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকারও বেশি।