নিজস্ব প্রতিবেদক: মৃত্যুর পর পরিশোধ করা হলো একেএম জালাল উদ্দিনের বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণের অর্থ। পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই গত শনিবার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।
জানা গেছে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন একেএম জালাল উদ্দিন। তিনি চাকরি জীবনে বিভিন্ন সময়ে ট্রেনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেন। অনেক সময় টিকিট কেটেছেন, আবার খেয়ালের বশে বিনা টিকিটেও ভ্রমণ করেছেন বহুবার। জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে বিনা টিকেটে ট্রেন ভ্রমণের অনুসূচনায় ভোগেন তিনি। বুঝতে পারেন, বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা অপরাধ। তাই রেলের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এই সরকারি কর্মকর্তা।
তার পরিবারের সদস্যরা জানান, মৃত জালাল উদ্দিন নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। তার ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখে গেছেন, জীবনে যতবার বিনা টিকিটে ভ্রমণ করেছেন, এজন্য অনুতপ্ত। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি পরিবারের সদস্যদেরকে বিনা টিকিটে ভ্রমণ বাবাদ রেলওয়েকে পাওনা পরিশোধের জন্যও বলে যান।
তার মৃত্যুর পরই একেএম জালাল উদ্দিনের ভাই মোহাম্মদ রুহুল আমিন পরিবারের পক্ষ থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নেন। এজন্য গত শনিবার তিনি ছুটে আসেন ঢাকার বিমানবন্দর রেল স্টেশনে। মৃত ভাইয়ের পক্ষ থেকে বিনা টিকিটে ভ্রমণ বাবাদ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।
বিমানবন্দর স্টেশন মাস্টার শাহাদাৎ হোসেনের হাতে এই অর্থ আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয়। এসময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ভাইয়ের শেষ দাবি মিটিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছোট ভাই রুহুল আমিন। উপস্থিত রেলের লোকজনও তখন চোখের জল ধরে রাখতে পারেনিনি।
রেলওয়ের বিমান বন্দর রেল স্টেশনের বুকিং সহকারী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরীত টাকা প্রাপ্তির রশিদে বলা হয়েছে, ‘মোহাম্মদ রুহুল আমীন, তার ভাই মৃত একেএম জালাল উদ্দিন আহমেদ, ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে বিনা টিকিটে যাতায়াত করায় ভাড়া বাবদ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন’।
বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ নিয়ে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, রেলওয়ে জাতীয় সম্পদ। টিকিট কেটে ভ্রমণ করা সকলের কর্তব্য, সকলের উচিত টিকিট কেটে ভ্রমণ করা। কেউ কেউ অনেক সময় বিনা টিকিটে ভ্রমণের টাকা জমা দিয়েছেন। তবে একসঙ্গে এত টাকা কোনো যাত্রী দেননি। এটাই প্রথম, কোনো ব্যক্তি এত টাকা জমা দিয়েছেন। এই টাকা রেলেওয়ের কোষাগারে জমা হবে বলেও জানান তিনি।
এসময় তিনি আরও বলেন, কেউ যেন বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ না করেন। রেল জাতীয় সম্পদ হিসেবে সকলেরই দায়িত্ব টিকিট কেটে ভ্রমণ করা। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো বলেও মনে করেন তিনি।
এমএফ