মঙ্গলবার | ১৩ মে, ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ, ১৪৩২

ডা. কাজেম আলী হত্যার রহস্য জানতে গ্রেপ্তার করতে হবে বিজয়-উৎপলকে

জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী: গত এক বছরেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমেদ হত্যা মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। এমন কী দেশব্যাপী আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
নিহতের সহকর্মীরা একাধিকবার বলেছেন, ডা. কাজেম হত্যাকাণ্ডে আরএমপির তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার বিজয় বসাক ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরী জড়িত। তাদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হত্যাকাণ্ডের এক বছর উপলক্ষে আজ বুধবার রামেকের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের নেতারা। খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম মুর্শেদ জামান মিঞা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘খুনের পুরো বিষয়টিতেই একটা রাজনৈতিক ব্যাপার আছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কিছুটা সন্দেহে করছিলাম, এই খুনের সঙ্গে একটা গোষ্ঠীর এজেন্টরা যুক্ত থাকতে পারে। সেই সময় আমরাও নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত ছিল। আমরাও গানম্যান পর্যন্ত ভাড়া করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমাদের যখন পুলিশ থেকে বলা হচ্ছিল, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চলেন। আমরা চলেছি। এই ঘটনায় একটা থার্ডপার্টি কাজ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খুনের ১৮টা ইভেন্ট ঘটে। খুনগুলো ম্যানুয়ালি করা হয়েছিল। ডা. কাজেমের হার্টে দুটা স্টেপ করেছে। হার্ট তিনভাগ হয়ে গেয়েছিল। এটা কোনো সাধারণ খুনি করতে পারে না। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে বিভিন্নস্থানে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তার মানে এটি অবশ্যই রাজনৈতিক ও ‘‘টার্গেট কিলিং’’।’
তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সময়ের সিসিটিভির ফুটেজ তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাওয়া করে দিয়েছে। তার মানে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত থাকতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। ঘটনার সময়কার সিসিটিভি কার্ট করে নেওয়া হয়েছে। ওখানকার আগে-পরের ফুটেজ আছে। তবে ওই সময়ের ফুটেজ নাই। যেখানে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে সেখানকার এক ব্যবসায়ীর সিসিটিভির ফুটেজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কয়েকটা এজেন্সি নিয়ে গেছে। তার মানে হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের রহস্য যাতে উদ্‌ঘান না হয় সে জন্য পরিকল্পিতভাবে এ সব করা হয়েছে।’
রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণেই রাজশাহীর প্রখ্যাত চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে চিকিৎসক নেতারা বলেন, ‘আরএমপির তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) বিজয় বসাক ও তৎকালীন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সাইবার ক্রাইম ইউনিট) উৎপল কুমার এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদেরকে ধরলেই ওই হত্যার সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে। অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিজয় বসাক বর্তমানে সিলেট রেঞ্জে সংযুক্ত এবং উৎপল কুমার টুরিস্ট পুলিশে রয়েছেন।’
এ সময় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) রাজশাহীর সভাপতি অধ্যাপক ডা. ওয়াসিম হোসেন, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম রাজশাহীর সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী মহিউদ্দিন আহমেদ, নিহত ডা. কাজেম আলীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডা. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। আজ দুপুরে রামেকে ডা. কাজেম আলী স্মরণে শোক সভা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজশাহীর সর্বস্তরের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পিবিআইয়ের রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমদ। তিনি প্রখ্যাত চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রাজশাহী শাখায় রোগী দেখতেন। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর রাতে তিনি চেম্বার থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে নগরীর বর্ণালী মোড়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে একটি সাদা মাইক্রো। সেই মাইক্রো থেকে নেমেই খুনিরা তাকে হত্যা করে চলে যায়। এ ঘটনায় আহত হন ডা. কাজেমের মোটরসাইকেল চালক। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হলেও এখনো পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। দীর্ঘদিন মামলাটি পড়েছিল রাজশাহী মেট্রোপলিটনের (আরএমপি) গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি)। সম্প্রতি তা পিবিআইয়ে পাঠানো হয়েছে।

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM