নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ৪টি, বাকি ৫১টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকার বিদায়ের পর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২৫ জন উপাচার্য, ১২ জন সহ-উপাচার্য এবং ৭ জন কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন। গতকাল বুধবার আরও দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। সব মিলিয়ে ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে (অধিভুক্ত কলেজসহ) ৪৪ লাখের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ‘অভিভাবকহীন’ হয়ে পড়া এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে না। নতুন নিয়োগও দেওয়া শুরু হয়নি। সরকার পতনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা প্রশাসনকে দলীয় মুক্ত করার দাবিও তুলছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে দেশের ১১টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, দুটি সরকারি কলেজ ও ৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের সংকটের বড় কারণ দলীয়করণ। বিগত সরকারগুলোর আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শীর্ষস্থানীয় পদে দলীয় আনুগত্য রয়েছে, এমন শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। ক্ষমতাসীন দলগুলোর ছাত্র সংগঠনও এই সুযোগে ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলে প্রভাব বিস্তার করে। এমন পরিস্থিতির ভুক্তভোগী হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসব অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রেখে গ্রহণযোগ্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান সংকটের বিষয়টি গতকাল সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সংবাদ সম্মেলনেও উঠে এসেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ৪৫টির মতো বিশ্ববিদ্যালয় এখন অভিভাবকহীন। শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব, প্রশাসনিক দিক দিয়ে সবার কাছে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব অন্তত প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা দলীয়ভিত্তিক প্রশাসন চান না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সরকারের আমলে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের বেশি ক্ষতি করা হয়েছে, তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। দেখা যেত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা নিয়োগ পেতেন না। এখন বিধিবিধান অগ্রাহ্য করে নিয়োগ দেওয়ার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি অভিন্ন পদ্ধতি ঠিক করে গণতান্ত্রিক উপায়ে উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। এখানে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ থাকবে না। এখন অস্থায়ী ভিত্তিতে দ্রুত যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের উপাচার্য নিয়োগ করা উচিত। তবে এই নিয়োগের সময় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন পদ্ধতিতে উপাচার্য নিয়োগের ঘোষণাটি দিতে হবে।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে একধরনের টানাপোড়েন চলছে। সরকারের কারও কারও চাওয়া, প্রথাগতভাবে দলীয় শিক্ষকদের উপাচার্য না করে তুলনামূলক অধিক যোগ্য ও সুনাম আছে এমন ব্যক্তিদের উপাচার্য করা দরকার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের চাওয়া, তাঁদের মধ্য থেকে যেন উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। এআরএস