নিজস্ব প্রতিবেদক: টঙ্গীর গার্মেন্টসকর্মী ফজলুল করিম হত্যা মামলায় বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল ৭১ টিভির সাবেক সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এই রায় দেন আদালত। তবে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, অত্র মামলার বাদী আনোয়ার হোসেন আয়নালের ছোট ভাই মোঃ ফজলুল করিম (২৮) টঙ্গী এলাকার বেস্ট শার্টস প্রতিষ্ঠানে স্যাম্পল ম্যান পদে চাকুরী করিত। গত ৫ আগস্টের পূর্বে হতে বাদীর ছোট ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বাদীর ভাই আন্দোলনে যোগ দেয়। আন্দোলনরত অবস্থায় সকাল ৮ টায় বালীর ভাইসহ সকল আন্দোলনকারীরা উত্তরা পূর্ব থানাধীন ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে জসিম উদ্দিন মোড়ের ডাচ বাংলা এটিএম সে বুখের সামনে পাকা রাস্তার উপর অবস্থান করিয়া আন্দোলন করার সময় কালে বিকাল সাড়ে ৪ টার সময় অত্র মামলার এজাহারে বর্ণিত আসামীদের নির্দেশে নির্দেশিত হইয়া আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং অজ্ঞাতনামা আসামীরা দলবদ্ধ ভাবে একত্রিত হয়ে শটগান, পিস্তল, রিভলবার সহ অন্যান্য অস্ত্র দিয়া নির্বিচারে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর অতর্কিত গুলি চালায়।
সেখানে বাদীর ভাইসহ অনেক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়। বাদীর ভাইয়ের ডান পাশে বুকের সামান্য নিচে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে পড়ে যায়। আন্দোলনে থাকা বাদীর আরেক ছোট ভাই মোঃ জিলানি (২১) সহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দ্রুত চিকিৎসার জন্য কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি চাসপাতাল নিয়া যায়। সেখানে অনেক আন্দোলনকৃত শিক্ষার্থী-জনতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণেবাদীর ভাইকে রাত্র ১টার পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি থাকা অবস্থায় তাকে আইসিউতে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
বাদীর ভাই জিলানি হাসপাতালে গিয়ে তার ভাইকে শনাক্ত করেন এবং হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে জানতে পারেন তার ভাইয়ের ডান পাশের বুকের নিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়। উক্ত আঘাতের কারণেই তাহার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে বাদীর ভাইয়ের লাশের সুরতহালসহ ময়না তদন্ত করার বিষয়ে উক্ত হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তাহারা অপারগতা প্রকাশ করে। অতঃপর হাসপাতাল থেকে মৃত দেহ বিনা ময়নাতদন্তে সৎকারের ব্যবস্থা করেন।
এ মামলার তদন্তকালে জানতে পারি সহকারী পুলিশ কমিশনার মুহাম্মাদ মতিউদ্দিন মিরাজ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম, গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ মহোদয় ও তার সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সের সভায়াতায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর এলাকা হতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক গত ২১ আগস্ট বিকাল অনুমান ৩ টা ৪০ মিনিটের সময় উল্লেখিত আসামীদ্বয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। কার্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক নিরাপত্তা জনিত কারণে আসামীদ্বয়কে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়। গোপন সূত্রের মাধ্যমে জানতে পারি আসামীদ্বয় কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের কঠোর হস্তে দমন করার জন্য সরকারকে উস্কানি প্রদান করে। আসামিদের পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড় ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উক্ত মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করা যাবে।
আগে বুধবার (২১ আগস্ট) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় শাকিল-ফারজানা। বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ইস্তাম্বুল হয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন শাকিল ও ফারজানা। এ সময় সঙ্গে তাদের মেয়ে ছিল। তারা একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের অনুমতিও পান। একপর্যায়ে ডিবির একটি দল বিমানবন্দর গিয়ে জানায়, শাকিল ও ফারজানা দম্পতির বিরুদ্ধে রাজধানীর একটি থানায় মামলা আছে। এ মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরে শাকিল-ফারজানা দম্পতিকে নিয়ে যান ডিবির সদস্যরা।
শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা কয়েক বছর ধরে একাত্তর টেলিভিশনে কাজ করছিলেন। ৮ আগস্ট তাদের ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় একাত্তর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। সেদিন বেসরকারি এই টেলিভিশন স্টেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একাত্তর মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা অনুযায়ী সেদিন (৮ আগস্ট) থেকেই শাকিল (হেড অব নিউজ) ও ফারজানাকে (প্রিন্সিপাল করেসপনডেন্ট ও প্রেজেন্টার) চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
আইএফ