নিজস্ব প্রতিবেদক: ফুলকপি চাষে করতে চেয়েছিলেন নিজের ভাগ্য উন্নয়নে। কিন্তু হলেন সর্বশান্ত। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আবাদে নেমেছিলেন কৃষক সেকেন্দার আলী। ক্ষেতের নষ্ট হওয়া ফুলকপি দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ফুলকপির গাছ তুলে আহাজারি করতে করতে একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে মাথায় পানি ঢেলে অন্য কৃষকরা তাকে সুস্থ করে তোলেন।
ঘটনাটি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার গগনবাড়িয়া মাঠে। বুধবার (৬ নভেম্বর) সকালে এমন ঘটনা ঘটেছে। একটি ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পর এলাকার অন্য কৃষকরাও সর্বশান্ত হয়েছেন। কৃষকদের ফুলকপি নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণের দাবিতে তাই ফুলকপির ক্ষেতেই আয়োজন করা হয়েছিল মানববন্ধন।
মানববন্ধনেই যোগ দিতে এসেছিলেন চুনিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক সেকেন্দার আলী। তিনি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২ বিঘা ৩ কাঠা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলেন। এ সময় তিনি তার ঋণের পাসবইও সঙ্গে এনেছিলেন। সেকেন্দার ছাড়াও আরও কয়েকজন কৃষক ফুলকপির খেত দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া, গগনবাড়িয়া ও সাকোয়া গ্রামের ১৩ জন কৃষক ‘নিউজিম’ নামের একটি ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গগনবাড়িয়া বাজারের মাহামুদা এন্টার প্রাইজ নামের একটি কীটনাশকের দোকান থেকে কার্বেনডাজিম গ্রুপের এই ওষুধ বিক্রি করা হয়েছিল। এটি বাজারজাত করেছে ব্লেসিং এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্যাকেটের গায়ে প্রস্তুতকারক হিসেবে লেখা আছে চীনের জিয়াংসু লাফেং বায়োকেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড। নিউজিমের ৫০০ গ্রামের একটি প্যাকেটের দাম ৫০০ টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ জন কৃষক গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে তারা উল্লেখ করেন, তাদের মোট ৪৬৯ শতক জমির ফুলকপি নষ্ট হয়ে গেছে। তারা ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অভিযোগ পেয়ে ইউএনও সাবরিনা শারমিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহানা পারভীন লাবনীকে তদন্ত করতে বলেছেন। মঙ্গলবার কৃষি কর্মকর্তা সরেজমিনে মাঠও পরিদর্শন করেন।
বুধবার মানববন্ধনে অংশ নেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শফি কামাল, হযরত আলী, মো. সেকেন্দার, মন্টু, লাল্টু, আজিবর, কামরুল, জারজিদ, রবিউল, ছাতারুলসহ অন্যান্য কৃষক।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কৃষক সেকেন্দার নিজের ফুলকপি দেখিয়ে খেতে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। বলতে থাকেন, ‘আমার তিন লাখ টাকা কিস্তি। আমরা মরে শেষ গো ভাই। আমাদের একটু বাঁচান ভাই।’ এরই একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
কৃষকরা জানান, নিউজিম ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পর ফুলকপির গাছ মরতে শুরু করলে তারা বিক্রেতা ছাতাহার আলীকে অবহিত করেন। ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনকেও জানান। কিন্তু মোতালেব বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি। আর বিক্রেতা ছাতাহার আলী এবং ব্লেসিং এগ্রোভেটের রাজশাহীর আরএসএম জহুরুল হক কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। এরমধ্যেই বাজার থেকে ওই নিউজিম প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। পরে আর কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা ইউএনও’র কাছে অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহানা পারভীন লাবনী বলেন, নিউজিম আসলে কলায় ব্যবহারের ছত্রাকনাশক। ফুলকপির জন্য কেন দেওয়া হয়েছে বুঝতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। নমুনাও সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষায় যদি দেখা যায় নিউজিমে সমস্যা তাহলে বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএফ