বৃহস্পতিবার | ১৯ জুন, ২০২৫ | ৫ আষাঢ়, ১৪৩২

২৪ ঘণ্টা ধরে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের, ২০ কিমি যানজট

জেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর: গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ী এলাকায় টি অ্যান্ড জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা গত ২৪ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে মহাসড়ক অবরোধ শুরু করে তারা। আজ রোববার সকাল ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। এ কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ২০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার সকাল ৯টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান।

তিনি জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া শ্রমিক আন্দোলন রাতভর চলে। টানা প্রায় ২৪ ঘণ্টা মহাসড়কে অবস্থান করে অবরোধ তৈরি করে রেখেছেন শ্রমিকেরা। এ কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে টঙ্গী থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এই যানজট ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী ছাড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যানজটে আটকা পড়ে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করছে।

এদিকে গাজীপুর মহানগর পুলিশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের অনুরোধে করে একটি ট্রাফিক আপডেট দেওয়া হয়েছে। ওই আপডেটে বলা হয়েছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে গার্মেন্টসের শ্রমিক কর্তৃক ভোগড়া বাইপাস ও মালেকের বাড়ীর মাঝামাঝি গতকাল সকালে শুরু করা মহাসড়ক অবরোধ এখন পর্যন্ত (সকাল ৭টা) অব্যাহত আছে। তাই সম্মানিত যাত্রীদের বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে রোববার সকালে লাঠিসোঁটা হাতে কিছু বহিরাগত যোগ দিয়েছে। শ্রমিকদের অবরোধের জায়গার উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে আটকে পড়া যানবাহনের মধ্যে বেশির ভাগই পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের গাড়ি। এসব গাড়ি গত রাতে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে যানজটে আটকা পড়ায় আর কোনো দিকে যেতে পারেনি। আটকে পড়া পণ্যবাহী যানবাহনে পচনশীল পণ্যও রয়েছে। যাত্রীবাহী অনেক বাস থেকে যাত্রীরা নেমে পায়ে হেঁটে বা বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেছে, ফলে অনেক যানবাহন যাত্রীশূন্য অবস্থায় যানজটে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

তাকওয়া পরিবহনের হেলপার আসিফ জানান, সকালে জৈনা বাজার থেকে যাত্রী তুলে জয়দেবপুর চৌরাস্তার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাসটি কয়েক ধাপে ছোট ছোট যানজট পেরিয়ে রাজেন্দ্রপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান পর্যন্ত যেতেই যানজটে আটকে যায়।

এদিকে শ্রমিক আন্দোলনে যানজটের কারণে মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন কম চলাচল করছে। স্বল্প দূরত্বের লোকাল পরিবহন চলাচল করলেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ তুলছেন যাত্রীরা।

সকালে রাজধানীর উদ্দেশ্যে যেতে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় দূরপাল্লার বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ষাটোর্ধ্ব আব্দুল কাদির। তিনি জানান, জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১৫০ টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য বাসগুলো জানাচ্ছে, রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। বাকি রাস্তায় যানজট। এখন বেশ চিন্তায় আছেন।

এদিকে, গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করে রেখেছে। ওই গ্রুপের ৬টি কারখানার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ নিয়ে শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের পাওনা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে শনিবার সকালে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে প্রথমে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা মালেকের বাড়ির কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, মহানগর পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। পরে কারখানা খুললেও দুই মাসের বেতন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ টালবাহানা শুরু করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার বেতন পরিশোধের তারিখ দিলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি।

কারখানার শ্রমিক আবুল কালাম বলেন, মালিকপক্ষ আমাদের পাওয়া বেতন না দিয়েই কারখানা বন্ধ রেখেছে। আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই বকেয়া পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি মেনে নিলে মহাসড়ক ছেড়ে দিব।

তবে, এ বিষয়ে চেষ্টা করেও টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদ শনিবার রাতে বলেন, সকাল থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত ১০-১২ বার শ্রমিকদের সঙ্গে আমরা দফায় দফায় আলোচনা করেছি। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত তাদের বকেয়া বেতন আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতীতে মালিকপক্ষ কথা রাখেনি এমন অভিযোগ তুলে শ্রমিকেরা প্রথমে বলেছিল বেলা দুইটায় অবরোধ তুলে নেবে, পরে বলেছিল বিকেল পাঁচটায় অবরোধ তুলে নিবে। কিন্তু তারা অবরোধ তুলে নেয়নি। সর্বশেষ শ্রমিকেরা বলেছিল, রাত ১০টায় অবরোধ তুলে নেবে। কিন্তু শ্রমিকেরা কারও কোনো কথা শুনছে না। তারপরও আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা কোনো আশ্বাস মানতে রাজি হচ্ছে না। ফলে মহাসড়কের যানজট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না।

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM