মঙ্গলবার | ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুপ্রিম কোর্টের অনুরোধের পরেও পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালগুলোতে কর্মবিরতি চলছে

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের অনুরোধে সাড়া দেয়নি পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালগুলো। সর্বোচ্চ আদালতের অনুরোধে দিল্লির এইমস হাসপাতালসহ বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হলেও পশ্চিমবঙ্গের আন্দোলনকারীরা তা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার ধর্ষণ–হত্যাকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্ট একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় দ্বিতীয় দিনের শুনানিকালে ওই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কলকাতা পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। ত্রুটিপূর্ণ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং এফআইআর দাখিল করা নিয়েও পুলিশকে ভর্ৎসনা করেছেন আদালত। সেই সঙ্গে সিবিআইকে মামলার তদন্তকাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ৫ সেপ্টেম্বর।

এরপরই সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়ে রোগীদের সেবার কাজে ফিরতে বলেন। তাতে সাড়া দিয়ে দিল্লির এইমস হাসপাতালসহ বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতাল তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

তবে গতকাল রাতে আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ সংস্থা জিবি বা জেনারেল বডির সদস্যরা এক সভায় মিলিত হয়ে ঘোষণা দিয়েছে, ধর্ষণ ও হত্যায় যুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তাঁদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। তাঁরা দাবি করেন, এত বড় এক ঘটনায় মূল হোতাদের শনাক্ত করতে পারছে না সিবিআই। তারা এখনো তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁদের দাবি, আগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হোক। এরপরই কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা।

এর আগে শিয়ালদহ আদালতে গ্রেপ্তার সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ পরীক্ষার আবেদন করেছিল সিবিআই। গতকাল সুপ্রিম কোট জানিয়ে দিয়েছেন, আজ শুক্রবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিয়ালদহের আদালত এ বিষয়ে নির্দেশ দেবেন।

পাশাপাশি ওই দিন সিবিআই আরও সন্দেহভাজন ছয়জনের পলিগ্রাফ পরীক্ষার আবেদন করেছে আদালতে। এ ছয়জনের মধ্যে রয়েছেন হাসপাতালের সদ্য পদত্যাগী অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, চারজন মেডিকেল শিক্ষার্থী ও একজন সন্দেহভাজনদের আত্মীয়।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই হত্যাকাণ্ডের পর মুখ না খুললেও গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে এমন হত্যাকাণ্ড নিয়ে কঠোর আইন এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচার ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার অনুরোধ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে মমতার ভাতিজা ও সংসদ সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ হতাকাণ্ডের জেরে হাসপাতাল ভাঙচুরের পর শুধু একবার কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে বলেছিলেন, চিকিৎসকদের দাবি ন্যায়সংগত। তিনি পুলিশকে ধর্ষণ–হত্যায় যুক্ত ব্যক্তিদের অবিলম্বে শাস্তি দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। এরপর ১৫ আগস্ট থেকে তিনি মুখে কুলুপ দিয়ে রেখেছেন। যদিও গতকাল এক এক্স বার্তায় তিনি বলেন, চিকিৎসকদের এ আন্দোলন তিনি ‘রাম-বামের’ রাজনীতির বন্ধনীতে থাকতে চান না। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বারবার বলে আসছেন এ ঘটনার পেছনে রয়েছে রাম-বামেরা।

অভিষেক এ কথাও বলেছেন, ১৫ বছরের প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া এখনই বন্ধ করা না গেলে ২০২৬ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে পস্তাতে হবে। তাই রাজ্যের ব্যর্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও মন্ত্রী-নেতাদের প্রয়োজনে সরিয়ে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।

ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গতকাল আর জি কর হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন সিআইএসএফ জওয়ানরা। নিয়োগ করা হয়েছে ১৫০ সিআইএসএফ জওয়ান। তাঁরা হাসপাতালের ২৬টি স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাবেন।

সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর হত্যাকাণ্ড নিয়ে গতকাল শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে।

৯ আগস্ট ভোরে আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় এক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। দায়িত্ব পালন শেষে সেমিনার রুমে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ওই চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। এর পর থেকেই চিকিৎসকদের বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি শুরু হয়। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পরদিন এক স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

কলকাতা হাইকোর্ট ১৩ আগস্ট এ ঘটনার মামলার তদন্তভার কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে তদন্ত সংস্থা সিবিআইকে দিয়েছে। ১৪ আগস্ট থেকে সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে।

আইএফ

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- Payra Team