নিজস্ব প্রতিবেদক: সিনেমা নির্মাতা ও পরিচাল মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন-এমন একটি খবর ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু সরকারিভাবে এ খবরের সত্যতা এখনও স্বীকার করা হয়নি।
গত ১০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন ‘টেলিভিশন’, ‘ডুব’–এর নির্মাতা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারে যোগ দেন ফারুকী। কিন্তু তার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তার পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে। হেফাজতে আন্দোলন নিয়ে তার ফেসবুক পোস্ট নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিতর্ক রয়েছে তার স্ত্রী তিশার মুজিব সিনেমায় মুজিবুর রহমানের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করা নিয়েও।
চারটা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার পদত্যাগের গুঞ্জন শুরু হয়। কয়েকজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ফারুকী আউট। একজন লিখেছেন, আহা ফারুকী, এ সপ্তাহের উপদেষ্টা। কিন্তু সরকারিভাবে এখন এই পদত্যাগ সম্পর্কিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি কিংবা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও ব্যবসায়ী শেখ বশির উদ্দিনের পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ১২ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী মো. সফিকুল ইসলাম সবুজ খান। নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে তাদের পদত্যাগ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ওই আইনজীবী নিজেকে উপদেষ্টামণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানান তিনি।
নোটিশে বলা হয়, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও ব্যবসায়ী শেখ বশির উদ্দিন গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বিগত ১৬ বছর পর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যার নায়ক খুনি শেখ হাসিনার পতনের পর সাধারণ ছাত্র-জনতা ও দেশবাসী একটি সুন্দর সরকার চেয়েছিল, সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে একটি ক্লিন ইমেজ ও সজ্জন ও সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করবেন। কিন্তু আমরা দেখছি ফ্যাসিস্ট সরকারের উপাদান বিদ্যমান এমন ব্যক্তিদের উপদেষ্টামণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। বিতর্কিত ও খুনি হাসিনার সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের উপদেষ্টা করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি নোবেলজয়ী ব্যক্তির উপদেষ্টামণ্ডলীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও তার স্ত্রী তিশা বিগত স্বৈরাচার সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে অনেক সুবিধার ভাগিদার হয়ে আজকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিজয়ের ভাগিদারও নিতে চায় এবং অন্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিন খুনি শেখ হাসিনার নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার ৪৯ নং এফআইআরভূক্ত অন্যতম আসামি এবং আওয়ামী সরকারের এমপির ভাই বিতর্কিত ও বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাভোগী মুজিববাদ আদর্শের অনুসারীদের উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানাই।
আরও উল্লেখ করা হয়, জুলাইয়ের বিপ্লবের নিহত ও আহত শহীদ ছাত্র-জনতার তাজা রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণে করে অবিলম্বে লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার সুবিধাভোগী বিতর্কিত ও ছাত্র হত্যার আসামিদের উপদেষ্টামণ্ডলীতে দেখতে চায় না। স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতনের আন্দোলনে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে গত ১৭টি বছর নানা নির্যাতন হামলা মামলার শিকার হয়েছি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২৬ দিন গুলির মুখে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদ বিদায় করার গর্বিত অংশীদার হিসেবে আমাকে উপদেষ্টামণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানাই।
নির্মাণের পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবেও পরিচিত ফারুকী। তাঁর মালিকানাধীন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ছবিয়াল’–এর ব্যানারে তিনি বহু বিজ্ঞাপন, নাটক ও সিনেমা নির্মাণ করেছেন। ১৯৯৮ সালে ফারুকী নির্মিত ‘ওয়েটিং রুম’ মুক্তি পায়। আড়াই দশকের ক্যারিয়ারে ‘ব্যাচেলর’, ‘টেলিভিশন’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘ডুব’, পিঁপড়াবিদ্যা’র মতো সিনেমা নির্মাণ করেছেন ফারুকী।
‘ডুব’, ইংরেজিতে ‘নো বেড অব রোজেস’ সিনেমাটি যেবার বাংলাদেশ থেকে অস্কার প্রতিযোগিতায় গিয়েছিল সে বছর; অর্থাৎ ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ভ্যারাইটির রিভিউয়ার ম্যাগি লি এমন এক বাক্য লেখেন, যা বাংলাদেশের জন্য গর্বের। সিনেমাটিতে সুখ, একাকিত্ব ও মনস্তত্ত্বের প্রসঙ্গ টেনে তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নিয়ে বলেন, ‘ফারুকী প্রমাণ করেছেন, তিনি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অনন্য কণ্ঠস্বর।’
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের শুরু থেকেই এই আন্দোলনের পক্ষে সরব ছিলেন ফারুকী। ফেসবুকে প্রতিদিনের নানা ঘটনা নিয়ে অকপটে নিজের মতো জানিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরও সমসাময়িক নানা বিষয়ে অন্তর্জালে সরব ছিলেন এই নির্মাতা।