নিজস্ব প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের ভবন নির্মাণকাজ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বন্ধ থাকা নির্মাণকাজ শুরুর দাবিতে বিক্ষোভ করেন। অন্যদিকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ‘মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত’ ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ নিয়ে সেখানে পাল্টা অবস্থান নেয় অন্যান্য বিভাগের একদল শিক্ষার্থী।
রাতেই উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, “উপস্থিত সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসবো। সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে অতি দ্রুত মিটিং করে এই বিষয়ের সমাধান করা হবে।”
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, চারুকলা বিভাগের ভবন নির্মাণকাজ শুরুর দাবি জানিয়ে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কিন্তু আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ না হওয়ায় তারা নতুন প্রশাসনিক ভবনের গেইটে তালা দেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে চারুকলার শিক্ষার্থীরা নিজেদের হলে ফিরে যান।
এরপর ১৫ মিনিট পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হল থেকে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এসে পৌঁছায়। তাদের হলের পাশে চারুকলার ভবন নির্মাণ না করতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
এ বছরের জুনে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অর্থায়নে চারুকলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যে স্থানটিতে ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেটি অতিথি পাখির অভয়াশ্রম খ্যাত জলাশয়ের পাশে হওয়ায় ওই সময় একদল শিক্ষার্থী তাতে বাধা দেন।
বাধা উপেক্ষা করে সেখানে অন্তত ১৫০টি গাছ কেটে নির্মাণকাজের শুরু করা হয়। এরপর সরকার পতনের পর একদল শিক্ষার্থী ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। পরে ৩ নভেম্বর এক প্রশাসনিক সভায় সেখানে সাময়িকভাবে ভবন নির্মাণকাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ভবন নির্মাণের পক্ষে অংশ নেওয়া চারুকলা বিভাগের ৫০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাঈদ হোসেন বলেন, “আমরা ভবন নির্মাণকাজ শুরুর জন্য শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। হঠাৎ রাতে একদল শিক্ষার্থী আমাদের পেছনে অবস্থান নিয়ে আমাদেরকে টার্গেট করে উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়েছে।
“আমাদের একজন শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে ‘অসম্মানজনক’ স্লোগানও দেওয়া হয়েছে। আমরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
ভবন নির্মাণের বিপক্ষে ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি নষ্ট করে ভবন নির্মাণ করা যাবে না। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ণ করে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে। একইসঙ্গে ভারতের টাকায় কোনো ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।
“চারুকলার জন্য যেখানে ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছিল সেখানে অনেক গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়। এর জন্য চারুকলা শিক্ষক ময়েজউদ্দিনের মত আওয়ামী লীগের দোষরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”
শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম নাইম বলেন, “আমাদের চারতলা আবাসিক হলের সামনেই ছয়তলা একাডেমিক ভবন চাই না। সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখি জাবির যেই লেকে এসে বসে সেই লেকের সামনে এই ভবন নির্মাণ করা পরিবেশের চরম বিপর্যয়।
“বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষকরা কিংবা পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা এইখানে যেন ভবন না হয় বারবার না করেছিল। তারপরও প্রকল্প পরিচালক ময়েজউদ্দিন গায়ের জোরে বিগত রেজিমে এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন।”