কলকাতা: কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের তরফে এ নিয়ে বিবৃতি না দিলেও রোববার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ মিশনের সামনে সেই চিত্রই ফুটে উঠেছে। কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে গেছে বাংলাদেশ মিশন।
মিশনের চারপাশে বহুদিন ধরেই চারটি পুলিশ চেকপয়েন্ট রয়েছে। তাতে প্রতি শিফটে ১০ থেকে ১২ জন কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র সদস্যরা দায়িত্বে থাকতেন।
সেই জায়গায় রোববার দেখা যাচ্ছে, প্রতি শিফটে একজন অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার অব পুলিশের (এসি) সঙ্গে দুইজন করে ইন্সপেক্টর, ১২ জন অফিসার এবং ৩০ জন সশস্ত্র কনস্টেবল মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সাধারণ পোশাকে পুলিশের সংখ্যাও। এমনকি কাউকে মিশনের ভেতরে প্রবেশ করতে হলে তাকে আগে পুলিশি তল্লাশির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এরপর মিশনের ভেতর প্রবেশ করা যাচ্ছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনের রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় যানবাহন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
যদিও রোববার কলকাতায় ছুটির দিন থাকায় খুব প্রয়োজন ছাড়া কর্মকর্তা কর্মচারীরাই মিশনে আসেন না। এছাড়া মিশনের ভেতরে মেটাল ডিটেক্টর ও অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষার পর রিসিপশন অবধি পৌঁছানো যায়।
সবমিলিয়ে বাংলাদেশ মিশন ঘিরে বাইরে এত পুলিশি নিরাপত্তা নজিরবিহীন। এর আগে এমনটা দেখা যায়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, পরপর বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে উত্তাল কলকাতা। ২৭ নভেম্বর থেকে সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো মিশনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। গত ২৮ এবং ২৯ নভেম্বর সেই বিক্ষোভ চরমে পৌঁছায়।
২৮ নভেম্বর ১৭টি হিন্দু সংগঠন একত্রিত হয়ে ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের ওপর হামলে পড়ে। তাদের ঠেকাতে রক্তাক্ত হন এক পুলিশ। এ সময় জ্বালানো হয় কুশপুত্তলিকা।
পরদিন ২৯ নভেম্বর মুসলিম রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) আরও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। তারা মিশনের গেট আগলে অবরোধ করেন। যার কারণে বেশ অনেকক্ষণ কেউ-ই মিশেনের বাইরে এবং ভেতরেও প্রবেশ করতে পারেনি।
পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও সেই দলের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি আসায় পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে। সেই ঘটনাগুলোর পরে ফের বিক্ষোভের আশঙ্কায় পুলিশি তরফে বাংলাদেশ মিশনের বাইরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে জানা যাচ্ছে, সোমবার (২ ডিসেম্বর) আরও উত্তাল হতে যাচ্ছে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত। বিজেপির ডাকে সেই অঞ্চলে উত্তেজনা আরও ছড়াতে পারে। যদিও সেই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী অর্থাৎ বিএসএফ।
২৭ নভেম্বরই বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী হুংকার দিয়েছিলেন, আগামী রোববারের মধ্যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি না দিলে সোমবার থেকে পেট্রাপোলে অবরোধ করবেন। ওই পথ দিয়ে যাতে বাংলাদেশে কোনো পণ্য যেতে না পারে। এই পথ অবরোধ চলবে অনির্দিষ্টকালের জন্য। তবে কোনো যাত্রীবাহী বাস অবরোধ করবে না বলে জানিয়েছিলেন শুভেন্দু।
এছাড়া কলকাতার প্রথমসারির মিডিয়াগুলো বর্তমানে স্থানীয় ইস্যুগুলো প্রায় ভুলতে বসেছে। তারাও দিনরাত বাংলাদেশ ইস্যুতে টিআরপি বাড়াচ্ছে। একই অবস্থা গণমাধ্যমগুলোর। অনেকক্ষেত্রে সেই খবর অতিরঞ্জিতও হয়ে যাচ্ছে।