শুক্রবার | ২৩ মে, ২০২৫ | ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

পোশাক শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়নের আহ্বান

নিউজ ডেস্ক: পোশাক শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ।

তিনি বলেছেন, “গার্মেন্টস শিল্পের সকল সমস্যার সমাধান সচিবালয় বা অভিজাত হোটেলে নয়, কারখানায় বসে হতে হবে। গার্মেন্টসসহ নানা খাতের শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসন করে কারখানাগুলোতে কাজের সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স (এডব্লিউএফএ) বাংলাদেশ আয়োজিত ‘পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ।

টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসাইনের সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তসলিমা আখতার, এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্সের বাংলাদেশ প্রতিনিধি আরিফুর রহমান, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ইদ্রস আলী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা, গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ছারোয়ার হোসেন, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান নয়ন, বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খুসবু আহমেদ রানা, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল আহসান জুয়েল, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ বলেন, “সংস্কার কমিশন গঠনের মাধ্যমে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করেছে। কমিশন শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি শিল্প খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চায়। এ কাজের সুবিধার্থে পোশাক শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন করতে হবে। যেখানে সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা থাকতে হবে। এ কাজে মালিক-শ্রমিক ও সরকারসহ সকল পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।”

পোশাক শিল্পের অস্থিরতা কমাতে মানবিক জীবনযাপন উপযোগী জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ।

তিনি বলেন, “কারখানায় ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ মুখে নয়, তা বাস্তবায়নে নীতি প্রণয়ন করতে হবে। কোনো শ্রমিকের মজুরি যেন দারিদ্র্যসীমার থেকে কম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সব খাতের শ্রমিকদের জন্য রেশন, ট্রেনিং সেন্টার এবং ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দিতে হবে।”

এম এম আকাশ আরো বলেন, “একজন মালিক আক্রান্ত হলে সকল মালিক তার প্রতিবাদ জানান। শ্রমিকদেরও সেই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সকল শ্রমিক সংগঠনকে এক প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আবুল হোসাইন বলেন, “দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে পোশাক শিল্প থেকে। দেশের ৮ কোটি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা কম। এর মধ্যে পোশাক খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। যেখানে নারী শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যদিও শ্রমিক হয়রানি ও কর্মপরিবেশের কারণে গার্মেন্টসে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৯৫ থেকে কমে ৬০ ভাগে এসেছে। এ অবস্থা পরিবর্তনে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে পোশাক খাতের অস্থিরতা নিরসনে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মালিক-শ্রমিক ও সরকারকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।”

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের কর্তৃত্ববাদী সরকার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। শ্রম উপদেষ্টা দ্রুত সময়ে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনঃনির্ধারণের কার্যক্রম শুরু ও ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়— শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট বিবেচনায় না নিয়ে বকেয়া বেতনের দাবির আন্দোলনে গুলি চালিয়ে তিনজন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। অথচ, পুঁজিবাদী শোষণ-বৈষম্যমূলক সমাজে দীর্ঘদিন যাবৎ সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার শ্রমজীবী মানুষরা। তাই, বৈষম্য নিরসনে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। এতে শ্রমিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা আংশিক পূরণ হবে। শিল্পে ও সমাজে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসবে।”

বৈঠকে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, গার্মেন্টস শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শ্রমিকদের জন্য সরকার ও মালিকদের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় ও সেক্টরভিত্তিক দাবি বাস্তবায়ন করা জরুরি। যৌথ দরকষাকষির সৃজনশীল পথ উন্মোচিত করে সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্কের উন্নয়ন করতে হবে। কারখানার ভেতরসহ সমাজের সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। মালিকদেরকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। অধিক মুনাফার লোভ ত্যাগ করতে হবে। শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করে ভীতি দূর করতে হবে। পরস্পরবিরোধী পক্ষ হওয়া সত্ত্বেও মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। পকেটস্থ ট্রেড ইউনিয়ন নয়, আদর্শভিত্তিক, দায়িত্বশীল এবং গঠনমূলক ট্রেড ইউনিয়ন করার সকল বাধা দূর করতে হবে।

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM