স্পোর্টস ডেস্ক: পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট জয়ের স্বাদ পেলো বাংলাদেশ। এ জয়ের ফলে আরো একবার ইতিহাস রচনা করলো টিম টাইগার্স। ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর বিভিন্ন জায়গায় উন্নতির ছোয়া দেখা গেছে। ক্রিড়াঙ্গনও যেনো তার ব্যতিক্রম নয়। পাকিস্তানকে তাদের নিজেদের দেশে হারিয়ে দেওয়া ছিলো কঠিন কাজ। তবে আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে মেহেদী মিরাজ বিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সকালে দ্রুত তাদের (পাকিস্তানের) অলআউট করা।’ সে লক্ষ্যে সফল বাংলাদেশ। দ্রুত অলআউট করে জয়ের পথ সুগম করেছে শান্তর দল। প্রথমবার পাকিস্তানকে টেস্টে হারিয়েছে, তাও আবার ১০ উইকেটে। ১৯১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন মুশফিকুর রহিম।
রোববার পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জিততে বাংলাদেশের দরকার ছিলো মাত্র ৩০ রান। দুই ওপেনার জাকির হাসান (১৫*) ও সাদমান (৯*) রান করে সহজেই সেই লক্ষ্য পেরিয়ে যান।
বাংলাদেশ এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্টের মধ্যে ১২ বারই হেরেছিলো। একমাত্র সাফল্য ছিল ড্র। পাকিস্তানের বিপক্ষে অধরা সেই জয় অবশেষে ধরা দিয়েছে। সেটাও আবার প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে, ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
এর আগে, রোববার টেস্টের পঞ্চম ও শেষদিনে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশের থেকে ৯৪ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন হাসান মাহমুদ। শান মাসুদের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল জমা পড়েছিল লিটন দাসের গ্লাভসে। আম্পায়ার জোরালো আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ।
মাসুদের ক্যাচ নেওয়া লিটন পরের ওভারেই শরীফুলের বলে বাবর আজমের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও শূন্য রানে ফিরতে পারতেন পাকিস্তান দলের সাবেক অধিনায়ক। লিটনের হাতে জীবন পাওয়ার পরও অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাবর। নাহিদ রানার বলে বোল্ড হয়েছেন। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের ডেলিভারিতে কাভার ড্রাইভ করেছিলেন তিনি। ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। ইনসাইড এজে বল আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে। ৫০ বলে ২২ রান করেন বাবর।
বাবর আজমকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের জুটি ভাঙার পরের ওভারেই শূন্য রানে সাউদ শাকিলকে ফেরান সাকিব। পাকিস্তানের পরের উইকেটটাও নিয়েছেন তিনি। তেড়েফুঁড়ে বড় শট খেলতে গিয়ে নিজেকে বিসর্জন দেন আব্দুল্লাহ শফিক। এই উইকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক বনে যান সাকিব।
সাকিবের পরপর ২ উইকেটে এমনিতেই ব্যাকফুটে ছিল পাকিস্তান। স্বাগতিকদের আরও বিপদে ফেলেন মিরাজ। লাঞ্চব্রেকের ঠিক আগে পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন তিনি। তার বলে আগা সালমানের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল দারুণভাবে লুফে নিয়েছেন প্রথম স্লিপে থাকা সাদমান ইসলাম।
বিরতি থেকে ফিরেও পাকিস্তান শিবিরে মিরাজের আঘাত। মিরাজের করা খানিকটা লো হওয়া বল ঠিকঠাক ব্যাটে লাগাতে পারেননি শাহিন আফ্রিদি। বল গিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন আফ্রিদি। মিরাজের পর আবারও উইকেটের উৎসব সাকিবের। হাওয়ায় ভাসানো বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে মুশফিকের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন নাসিম শাহ।
শেষের দুই উইকেট নিজের পকেটে পুড়েছেন মিরাজ। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে বোল্ড করার পর মোহাম্মদ আলিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই অফ স্পিনার। সাকিব ও মিরাজ দুই স্পিনার মিলে নিয়েছেন ৭ উইকেট। একটি করে উইকেট শিকার করেছেন শরিফুল, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা।
পাকিস্তান ২৯ রানের লিড পেলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য লক্ষ্য দাড়ায় ৩০ রানের। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬ ওভার ৩ বলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার জাকির হাসান ১৫ রানে এবং সাদমান ইসলাম ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন।
এনএইচ