নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, জুলাই-আগস্টে পুলিশের ভূমিকা সঠিক ছিল না। ভূমিকা সঠিক হলে এত লোকের মৃত্যু হওয়ার কথা না। মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ঐ আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় যেসব সাংবাদিকদের মামলার আসামি করা হয়েছে তদন্তে তাদের নামও বাদ যাবে।
রোববার দুপুরে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, গণমামলায় গণ আসামি থাকবে না। অযথা কাউকে হয়রানি করা হবে না। যারা অপরাধে জড়িত না তাদেরকে ধরা হবে না। হয়রানি করা হবে না। জুলাই-আগস্টের ঘটনায় করা অনেক মামলার বাদী মামলা বাণিজ্য করছেন। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা হবে। মামলা অপকর্মে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যেসব মামলা হয়েছে সেসব মামলায় অন্য কায়দায় ব্যবসা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাদী মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে প্রমাণ না পেলে নাম বাদ দেবেন। অনেক বাদী উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলা করেছেন পরিকল্পিতভাবে বাণিজ্য করতে। এজন্য ১৫০-২০০ বা আরো বেশি আসামি করা হয়েছে। প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা বা বিগত সরকারের শীর্ষ নেতাদের নাম দিয়ে পরে ঢালাওভাবে ইচ্ছেমতো নাম মামলায় অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশকে মামলা নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
মামলা এবং গ্রেফাতার বাণিজ্যে কিছু পুলিশ সদস্য জড়িত বলে স্বীকার করে শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, গত ৫ আগস্টের পর পুলিশ নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যাওয়ায় ঐ সময় রাজারবাগের পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। আত্নরক্ষার্থে খিলগাঁও থানা থেকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পুলিশ রাজারবাগে যায়। ট্রমার মধ্যে পড়ে যায় পুলিশ সদস্যরা। যা এখনো কাটেনি।
এমন বিভৎস পরিস্থিতির সম্মুখীন পুলিশ কখনো হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশের অনুপস্থিতে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। খুন, লুটপাট, ছিনতাই, ডাকাতি বেড়ে যায়।
ডিএমপি কমিশনার ছাড়াও হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ) ফারুক আহমেদ, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) ইসরাইল হাওলাদার, অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক, নজরুল ইসলামসহ পদস্থ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ক্র্যাব সভাপতি কামরুজ্জামান খান, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি শাহীন আবদুল বারী, অর্থ সম্পাদক হরলাল রায় সাগর, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রাজী, দফতর সম্পাদক কামাল হোসেন তালুকদার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নেহাল হাসনাইন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাকিব মানিক, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইসমাঈল হুসাইন ইমু, কল্যাণ ও আইন সম্পাদক ওয়াসিম সিদ্দিকী, কার্যনির্বাহী সদস্য আলী আজম ও শেখ কালিম উল্যাহ্ নয়ন উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ডিএমপি কমিশনার চলমান পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি সবাইকে আইন মেনে চলার কথা বলেন।
ট্রাফিক নিয়ম ঠিক করতে চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৫৩ বছরে নগর পরিকল্পনা হয়নি। দুই কোটি লোকের এই শহরে কোনো নগর পরিকল্পনা না থাকায় প্রতিদিন ট্রাফিক আইনে কয়েক হাজার মামলা করতে হচ্ছে। সড়কে শৃঙ্খলার জন্য মানুষকে ট্রাফিক আইন মানতে হবে। এই শহরে সবধরনের যানবাহন এক রস্তায় চলাচল করে। অটোরিকশা যেভাবে বাড়ছে তাতে মানুষ পায়ে হেটে রাস্তায় চলতে পারবে না। অনেকেই না বুঝে হুজুগে অটোরিকশা কিনে রাস্তায় নামাচ্ছে। অথচ এই খাত থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না।