রবিবার | ১ জুন, ২০২৫ | ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে বেশি নেয়া হচ্ছে ২৮ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্রেতার স্বার্থ উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীদের কথায় তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ব্যবসায়ীদের কথামতো দুই ধাপে শুল্ককর কমালেও গত এক মাসে ভোজ্যতেলের দাম ভোক্তা সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। বরং দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও করেছেন। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিজেরাই দাম বাড়িয়েছেন। সবশেষ সয়াবিন তেল সরকারিভাবে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হলেও মাসব্যাপী ২৮ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি করেছে। এতে দেখা গেছে, এক মাসে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট থেকে প্রায় ৫১৩ কোটি টাকা লোপাট করেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা কঠোর পদক্ষেপ না নিয়ে ব্যবসায়ীদের দেখানো পথেই হেঁটেছেন। এতে প্রতারিত হচ্ছের ভোক্তারা। বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সরকারিভাবে দাম বাড়ানোর আগেই কোম্পানিগুলো এক মাস আগ থেকেই লিটারে প্রায় ২৮ টাকা বেশি দরে ভোজ্যতেল বিক্রি করেছে। সে হিসাবে ৫০০ কোটি টাকার বেশি টাকা মাসের ব্যবধানে ভোক্তার পকেট থেকে লুট করা হয়েছে। তবে বাস্তবে এই লুটপাটের পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে। কিন্তু সরকার ক্যাবের কথা শুনতে চায় না। আগে শেখ হাসিনার সরকারও শোনেনি। এবারের সরকারও শুনছে না। কিন্তু ঠকছেন ভোক্তা।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কথা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের মূল্য বেড়েছে। এলসি করতে পারছে না। এ কথাগুলো ব্যবসায়ীরা আগের সরকারের আমলেও বলতেন। তবে সয়াবিন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েকদিন আগে অল্প পরিমাণে বেড়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যে পরিসংখ্যান ট্যারিফ কমিশনে দিচ্ছে, তারা সেটা মেনে নিচ্ছে। যাচাই করছে না। তাই মূল্য বৃদ্ধির আগে গণমাধ্যমকর্মী ও ক্যাবের প্রতিনিধি থাকা দরকার। কিন্তু ব্যবসায়ী ও ট্যারিফ কমিশন মিলে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ভোজ্যতেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার বলেন, কয়েকদিন থেকে আমরা কীভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করেছি। বিশ্ববাজারে প্রতি টন তেলের দাম ১২০০ ডলারে উঠেছে। গত এপ্রিলে সরকার যখন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি টন তেলের দাম ছিল ১০৩৫ ডলার। এখন ১১০০ ডলার ধরে লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ১০৫ ডলার। গত আগস্টে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১ ডলারে, সেপ্টেম্বরে আবার কিছুটা বেড়ে ১ হাজার ৪৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে সার্বিকভাবে দাম নিম্নমুখী। গত ডিসেম্বরের তুলনায় সয়াবিনের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। ঐ সময় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে এর দাম ঊর্ধ্বমুখী। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম ১০০ থেকে ৭৮ ডলারে নেমে এসেছে। এতে জাহাজ ভাড়াসহ অন্য পরিবহন খরচ কমেছে। দেশে ডলারের দামও কমেছে। আগে আমদানিতে প্রতি ডলার কিনতে হতো সর্বোচ্চ ১৩২ টাকা করে। এখন তা কমে ১২০ টাকায় নেমে এসেছে। এসব কারণে আমদানি খরচ কমেছে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই আমদানি পণ্যের দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে দাম কমেনি। উলটো আরো বেড়ে যাচ্ছে।

এদিকে দুদিন আগে লিটারে ভোজ্যতেলের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে। সেক্ষেত্রে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা লির্ধারণ করা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ধরা হয়েছে লিটারে ১৫৭ টাকা। আর পাম তেলের খুচরা মূল্য দেওয়া হয়েছে ১৫৭ টাকা। তবে বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়ালেও মূল্য কার্যকর করা হয়নি। এখানেও ব্যবসায়ীরা কারসাজি করছে। বোতল তেলের মূল্য ঠিক রাখা হলেও খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৮৫ টাকা। এই একই দামে এক মাস ধরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুর-৬ কাঁচাবাজারের মুদি ব্যবসায়ি আব্দুল হালিম বলেন, সরকার নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে। পাঁচ লিটারের তেল ৮৩৭ টাকা কিনে ৮৫২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দুদিক থেকে লাভ করছে কোম্পানিগুলো। তিন লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৫১৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বিক্রি করতে হচ্ছে ৫২৫ টাকায়। খোলা সয়াবিন লিটার প্রতি ১৮৮ টাকায় ডিলারদের কাছে কিনতে হয়। বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮৫ টাকা। এই দাম গত কয়েক মাস থেকে চলছে। পাম অয়েল ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিনতে হচ্ছে ১৭১ টাকায়।

ঢাকার কচুক্ষেত বাজারে ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন বলেন, ডিলাররা এখনো তেলের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক করেনি। সরকারি মূল্যের বাড়তি দামে বিক্রির জন্য তারা এখনো সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। এক লিটারের তেল এখনো ডিলাররা দেয়নি। তারা সরবরাহ করলে ১৭৫ টাকায় গায়ের রেট দিয়ে বিক্রি করতে হবে। কিনতে হবে ১৭২ টাকায়। কিন্তু তারা খোলা তেল বিক্রি করে বেশি লাভের আশায় এক লিটারের বোতলজাত তেল সরবরাহ করছে না। আর এখন লিটার প্রতি কোম্পানিগুলো আমাদের ৩ টাকা লাভ করার সুযোগ দিয়েছে। যা আগে ৪-৫ টাকা ছিল। এতে ভোক্তার সঙ্গে আমাদেরও ঠকাচ্ছে।

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM