নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রাথমিক প্রতিবেদন আজ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেবে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় প্রাথমিক অবস্থায় নাশকতার আলামত পেয়েছেন তারা। এ কারণেই আরো গভীরভাবে তদন্ত করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ৯তলা ভবনের সাত তলা, ছয় তলা এবং আট তলায় পৃথক তিন স্থানে একই সময়ে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা গেছে। শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটলে সেই আগুন একই ফ্লোরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়বে। আগুন এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে একই সময়ে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ নেই।
‘কারণ, সচিবালয়ের ভবনগুলোতে প্রতিটি ফ্লোরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পৃথকভাবে সার্কিট ব্রেকার বসানো রয়েছে। ইচ্ছা করলে যে কেউ একটা ফ্লোরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ও চালু করতে পারবে। শর্টসার্কিট হলে নির্দিষ্ট ঐ ফ্লোরেই আগুন একই সময় ছড়িয়ে পড়বে। অন্য ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ নেই।’
সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন ফ্লোর থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এরই মধ্যে এসব আলামত প্রাথমিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সব পরীক্ষায় স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড মনে হচ্ছে না। এ জন্য তদন্ত আরো সময় নিয়ে করে মন্তব্য করতে হবে বলে ঐ কর্মকর্তা জানান।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে যাওয়াসহ বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনের কারণ অনুসন্ধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে প্রধান করে বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল সরকার। তদন্ত কমিটি আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে কী পাওয়া যেতে পারে এ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, ৭ নম্বর ভবনের ৬ তলা থেকে নয়তলা পর্যন্ত ফ্লোরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ফ্লোরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অফিস রয়েছে।
গত ২৫ ডিসেম্বর বুধবার দিনগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগে। ৬ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। তবে এর পরও ভবনের কিছু জায়গায় আগুনের অস্তিত্ব ছিল। আরো প্রায় ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ভবনটির সম্পূর্ণ আগুন নির্বাপণ করা হয়।