ডেস্ক নিউজ: ব্রিটেনে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম থেকে সরে আসার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে রয়েছেন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক। অর্থ আত্মসাতে সহায়তার অভিযোগ ওঠার পর তাকে দুর্নীবিরোধী কার্যালয় ফাইন্যান্সিয়াল স্যাংকশন ইমপ্লিমেন্টেশনের পদ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানিয়েছেন বিরোধী দলের এমপিরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে নিজ পরিবারের সদস্যদের ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে কাজ করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি রোসাটম (রাশিয়ান ফেডারেশন স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন)।
কিন্তু আর্থিক নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন অফিস – যা টিউলিপ সিদ্দিক তত্ত্বাবধান করেন – ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রোসাটমের সাথে যুক্ত কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের উপর কমপক্ষে ৪৫টি আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
রোসাটমের সহায়ক সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়মিতভাবে হ্যাম্পস্টেডের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের পর্যালোচনা করা উচিত ছিল।
যেহেতু তার ব্যক্তিগত লেনদেন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি তাই কায়ার স্টারমারকে নিশ্চিত করতে হবে যে টিউলিপকে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা এবং দুর্নীতি বিরোধী নীতিগত সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, বলেছেন টোরি স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র ম্যাট ভিকার্স।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলেছে যে অভিযোগ করা অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ঘটেছিল যখন টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
জুলাই-আগস্টে শত শত বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
বাংলাদেশের হাইকোর্টে অভিযোগ উঠেছে যে ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক ১০ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তিতে ‘মধ্যস্ততাকারী’ হিসেবে কাজ করেছেন।
২০১৩ সালে টিউলিপ সিদ্দিক যখন লেবার কাউন্সিলর ছিলেন তখন ক্রেমলিনে শেখ হাসিনা এবং ভ্লাদিমির পুতিন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
দুদক মিসেস সিদ্দিকের মা শেখ রেহানা, খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আরও দুই আত্মীয়ের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে। তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া কোম্পানি এবং মালয়েশিয়ান ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার রাতে মিসেস সিদ্দিক এবং তার তিন আত্মীয় তার জন্মভূমি বাংলাদেশে আটটি সরকারি প্রকল্প থেকে ১.৪ বিলিয়ন পাউন্ড পাচারের অভিযোগে একটি নতুন দুর্নীতির তদন্তে রয়েছেন।
মিসেস সিদ্দিক সমস্ত অভিযোগ তীব্রভাবে অস্বীকার করেছেন, লেবার কর্মকর্তারা বলেছেন, তার দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
কিন্তু ডেইলি মেইল একচেটিয়াভাবে পারমাণবিক তদন্ত প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, মন্ত্রিপরিষদ অফিসের প্রোপ্রিটি অ্যান্ড এথিক্স টিমের একজন কর্মকর্তা মিস সিদ্দিকের সাক্ষাৎকার নেন, যিনি দাবিগুলোকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে বর্ণনা করেছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে মিস সিদ্দিক ও আরো চারজনের ‘অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি এবং বিবৃতি’ সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছে দুদক। তবে টিউলিপকে ফাইন্যান্সিয়াল স্যাংকশন ইমপ্লিমেন্টেশনের দায়িত্ব থেকে সরানো হবে কিনা, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র: ডেইলি মেইল