সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ১৩ পুলিশকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এনায়েতপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে সোমবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা এক আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেন এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু। পুলিশ ওই দাবি মেনে নেয়নি। তার অবৈধ দাবি মেনে না নেওয়ায় পুলিশের ওপর তার ক্ষোভ ছিল। ওই আসামির বিরুদ্ধে মামলাও নেয় পুলিশ। সেসময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাককে অপসারণের দাবিও করেছিলেন তিনি। পরে আসামিরা এনায়েতপুর থানা পুলিশের ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। গত ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে বিক্ষোভ করে। পরে বাচ্চুর নেতৃত্বে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী থানা ঘেরাও করে। এ সময় ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ড মাইক দিয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুল্লুক চাঁন, বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫ থেকে ৬ হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
ওসি রাজ্জাক বলেন, আপনারা থানার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করবেন না। এ কথায় ছাত্র-জনতা থানা ছেড়ে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পরই পুলিশের ওপর পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ১নং আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে এজাহার নামীয় আসামিসহ পাঁচ থেকে ছয় হাজার দুষ্কৃতকারী দেশি অস্ত্র নিয়ে থানায় হামলা চালায়। আত্মরক্ষায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। আসামিরা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই আনিছুর রহমান, এসআই রহিজ উদ্দিন খান, এসআই প্রনব কুমার বিশ্বাস, কনস্টেবল আব্দুল সালেক, কনস্টেবল হানিফ আলী থানার পাশে বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। আসামিরা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তাদেরকেও পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। মোট ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে সেসময় হত্যা করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ ১৩ পুলিশ হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।