বুধবার | ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলকাতায় উত্তাল বিক্ষোভ, পুলিশের জলকামান-টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা বিক্ষোভ-সহিংসতায় উত্তাল হয়ে উঠেছে। আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার চিকিৎসকের ধর্ষণ-মৃত্যুর বিচারের দাবিতে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’ অভিমুখে বিক্ষোভকারীদের যাত্রার সময় পুলিশ জলকামান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, পুলিশ এই বিক্ষোভের কোনো অনুমতি না দিলেও বিক্ষোভ শুরু হয়। এর আগে, গতকাল সোমবার রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস এই বিক্ষোভ মিছিল মূলত রাজ্যকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করে। আর এর জন্য তারা বিরোধী দল বিজেপিকে দায়ী করেছে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সকালে একদল বিক্ষোভকারী কলকাতার কলেজ স্কয়ারে জড়ো হয়ে নবান্নের দিকে মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এ সময় তারা ইন্টার্ন চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেয়। বিক্ষোভে যোগ দেয় একাধিক ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক ফোরাম।

নবান্ন অভিমুখে বিক্ষোভকারীদের যাত্রা ঠেকাতে পুলিশ যেন অঞ্চলটিকে রীতিমতো দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলে। রাজ্য সচিবালয়ের আশপাশের এলাকায় অন্তত ৬ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভে নজরদারি করার জন্য আকাশে উড়ানো হয় ড্রোন। এ ছাড়া, রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের বাঁধা দিতে বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যারিকেডে পুতে দেওয়া হয় ঢালাই দিয়ে। এ ছাড়া ব্যারিকেডের গায়ে লাগানো হয় গ্রিজ। যাতে সেগুলো ধরে তুলে ফেলতে না পারে আন্দোলনকারীরা।

তৃণমূল কংগ্রেসে দাবি, এই বিক্ষোভ মিছিল মূলত বিজেপি সমর্থিত। তবে আয়োজকেরা বলছেন, এটি ছাত্র সংগঠনগুলোর পরিকল্পিত মিছিল। তবে যেসব ছাত্র সংগঠনের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই নিবন্ধিত নয়।

অপরদিকে আজ সকালে বিধানসভায় বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, প্রতিবাদ পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া চার ছাত্রকর্মী নিখোঁজ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই ছাত্রকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে খাবার বিতরণ করছিল। একপর্যায়ে তাঁরা হাওড়া স্টেশনে পৌঁছার পর মধ্যরাতের দিকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেছে। তাঁরা হলেন—শুভজিৎ ঘোষ, পুলোকেশ পণ্ডিত, গৌতম সেনাপতি, প্রিতম সরকার। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বা তাঁরা ফোনেও সাড়া দিচ্ছেন না।’

এই বিক্ষোভ-আন্দোলনের চার কর্মীকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানিয়েছে, আজকের বিক্ষোভ মিছিলের সময় বড় ধরনের সহিংসতা সংঘটিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এমনকি হত্যা বা হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রও করা হয়েছিল। জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের পরিবারকে জানানো হয়েছে।

তৃণমূল বলেছে, এই মিছিল ছাত্রদের বিক্ষোভের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা। রাজ্য মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য গতকাল সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা বিজেপি-এবিভিপির গোলযোগ তৈরির চক্রান্ত। পুলিশের ইউনিফর্মে অপরাধীদের গুলি চালানোর চক্রান্ত। আগামীকাল পরীক্ষা আছে। ছাত্ররা কি এটা করতে পারে? তারা লাশের রাজনীতি করছে।’

দুটি ভিডিও প্রকাশ করে তৃণমূল কংগ্রেস জোর দিয়ে দাবি করেছে যে, এ থেকেই প্রমাণিত হয় অশান্তি সৃষ্টির চক্রান্ত করা হয়েছে। ভিডিওগুলোতে বেশ কয়েকজন পুরুষকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের লাশ দরকার।’ তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার অভিযোগ করেছেন, ‘বিজেপি নেতৃত্বকে বলা হয়েছে যে নন্দীগ্রামের মতো ঘটনা না ঘটলে এবং লাশ না পড়লে গণজোয়ার বিজেপির পক্ষে যাবে না।’

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- Payra Team