শুক্রবার | ৯ মে, ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ, ১৪৩২

চীন কানাডা মেক্সিকোর ওপর ট্রাম্পের নতুন শুল্ক কার্যকর মঙ্গলবার থেকে, বৈশ্বিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির শঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিতে শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ করে ও চীনের পণ্যে বর্তমান হারের চেয়ে বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। তবে ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের এ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এতে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দাভাব ও মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এই নতুন শুল্ক নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদে শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন, এই শুল্ক ভোক্তাদের জন্য ব্যয়বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যয় ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেবে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে বলেছেন, কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে আমদানির ওপর শুল্ক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ হবে। একইসঙ্গে বিপজ্জনক মাদকের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণেও আসবে।

ট্রাম্প কানাডা থেকে আমদানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে কানাডার জ্বালানি পণ্যের ক্ষেত্রে এই হার ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার স্বাক্ষরিত শুল্ক নীতিতে একটি শর্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যদি কোনো দেশ এই শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে তবে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কের হার আরও বাড়াতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, কানাডা, মেক্সিকো ও চীন এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

ট্রাম্প কয়েক মাস ধরেই এই তিন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিচ্ছিলেন এবং তিনি বারবার দাবি করেছেন, এই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ও মাদক ফেন্টানিল সরবরাহ বন্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এসব ঠেকাতে তিনি এমন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ট্রাম্প অবশ্য আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই ঘোষণা শুধুমাত্র প্রথম ধাপ হতে পারে এবং আরও বিস্তৃত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে তার।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, ওষুধ, তেল ও গ্যাস, সেমিকন্ডাক্টর চিপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানির ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হবে।

ননপার্টিজান থিংক ট্যাঙ্ক ট্যাক্স ফাউন্ডেশন অনুমান করছে, ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি গৃহস্থালির বার্ষিক গড় করবৃদ্ধি ৮৩০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

সিনেটর সুসান কলিন্স (আর-মেইন) শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, কানাডা থেকে আসা কিছু পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক অনেক পরিবার, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, বনজ শিল্প, ছোট ব্যবসা, লবস্টার শিল্প এবং কৃষকদের জন্য কঠোর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, তার শুল্কের ফলে ‘স্বল্পমেয়াদি কিছু সমস্যা’ সৃষ্টি হতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এই পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং দেশীয় উৎপাদন ফিরিয়ে আনবে। ট্রাম্প যখন থেকে শুল্ক আরোপের হুমকি দিতে শুরু করেন, তখন থেকেই কানাডা ও মেক্সিকো দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শনিবার রাতে এ বিষয়ে কানাডার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ঘোষণা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড শুক্রবার বলেন, আমরা এই বাণিজ্য লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প তার ওভাল অফিসে বসে কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন। আমাদের প্রতিক্রিয়ামূলক শুল্ক কেবল শুরু। কানাডার এমন অনেক কিছু রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য- হাইগ্রেড নিকেল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ।

২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রথমবার চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন। তখন প্রত্যাঘাতমূলক শুল্কের মূল লক্ষ্য ছিল কৃষি খাত। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের প্রধান বিল রেইনশ দ্য হিলকে বলেন, কৃষি খাত সাধারণত প্রথম লক্ষ্যবস্তু হয়, কারণ সহজেই বিকল্প উৎস পাওয়া যায়। এটি ট্রাম্পের সমর্থনশীলদের অন্যতম শক্তিশালী খাতের ওপর সরাসরি আঘাত হানে। ২০১৮ সালে শেষ পর্যন্ত তিনি কৃষকদের সরকারি ভর্তুকি দিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন শুল্কের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হতে পারে অটোমোবাইল শিল্প। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে গাড়ি উৎপাদন একীভূত রয়েছে এবং ১৯৯০-এর দশকের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিগুলোর পর এই খাত একসঙ্গে কাজ করছে। রেইনশ বলেন, সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে অটোমোবাইল শিল্প, কারণ অনেক যন্ত্রাংশ ও উপাদান একাধিকবার সীমান্ত অতিক্রম করে। যদি প্রতিবার একটি অংশ সীমান্ত অতিক্রম করার সময় শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে ব্যয় দ্রুত বেড়ে যাবে।

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM