নিজস্ব প্রতিবেদক: এনবিআর সূত্রে এসব জানা গেছে, জুনের মধ্যে ৩০ হাজার মেশিন বসানোর কথা থাকলেও তাতে ব্যর্থ হয়েছে পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস। এক বছরেও প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ায় ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) বিকল্প খোঁজার নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর।
একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মেশিন আমদানিতে নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
সাফল্য না আসায় ইএফডির বিকল্প ভাবছে এনবিআরএনবিআর বলছে, জেনেক্স ইনফোসিসের শর্ত লঙ্ঘন, মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অসহযোগিতা ও প্রয়োজনীয়সংখ্যক ইএফডি চালু না করায় ইএফডি প্রকল্পে সাফল্য আসেনি। এই পরিস্থিতিতে ইএফডি ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে ইএফডি মেশিনের বিকল্প খুঁজে বের করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠকে কার্যকর ও সমন্বিত অটোমেশন নিশ্চিতের তাগিদ দেওয়া হয়।
ইএফডি মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের দায়িত্ব পাওয়ার আগে থেকেই ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ ছিল জেনেক্স ইনফোসিসের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমাম ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কোটি টাকা লেনদেন করলেও রিটার্ন জমা না দেওয়ার অভিযোগ আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এনবিআরের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইএফডি ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব পায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেনেক্স। কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। গত জুনের মধ্যে ৩০ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি বসানোর কথা থাকলেও মাত্র ১৫ হাজার ৯৯৫টি বসাতে পেরেছে তারা।
এর মধ্যে আট হাজার মেশিনের ক্ষেত্রে এনবিআরের স্পেসিফিকেশন না মেনে আমদানির নীতিমালাও লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে শিগগিরই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। আরো কিছু কারণ আছে। যার ফলে এই ব্যবস্থা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেনি। এ অবস্থায় বিকল্প ভাবছি আমরা।
বিকল্প কী হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে এনবিআরের মধ্যকার উইংগুলোর মধ্যে ডিজিটাল ইন্টিগ্রেশন, এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইন্টিগ্রেশন তৈরি করার পর তা ঠিক করা হবে।
পাঁচ বছর ধরে আলোচনার পর গত বছর চালু করা হয় ইএফডি ব্যবস্থা। লক্ষ্য ছিল, ২৫ ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য ট্র্যাক ও সঠিকভাবে ভ্যাট আদায় করা। কিন্তু এ ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি এনবিআর।
২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রারের (ইসিআর) মাধ্যমে ভ্যাট আদায় করা হতো। তবে ২০১৮ সালে ২৫ ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইএফডির মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের উদ্যোগ নেয় এনবিআর। ব্যবস্থাটি এনবিআরের সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত রাখার কথা ছিল। কোনো পণ্য বিক্রির তথ্য এতে ইনপুট দিলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনবিআরে রক্ষিত সার্ভারে যুক্ত হবে এবং ভ্যাটের পরিমাণ দেখা যাবে এমনটাই ছিল পরিকল্পনা।
তবে ভ্যাট ফাঁকি রোধের জন্য এই ব্যবস্থা চালু করতে পাঁচ বছর দেরি হয়। শুরুতে প্রায় এক বছর পরীক্ষামূলকভাবে কিছু প্রতিষ্ঠানে চালু হওয়ার পর গত বছরের আগস্টে জেনেক্স ইনফোসিসের মাধ্যমে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দেয় এনবিআর। বছরে ৬০ হাজার এবং পরের পাঁচ বছরে তিন লাখ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এই মেশিন স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র ১৫ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এসেছে ইএফডির আওতায়।
শুরুর আগে থেকেই ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জেনেক্স ইনফোসিসের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আপত্তি ছিল। তাঁরা জানান, শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করলে এনবিআর উপকৃত হতো। একটি প্রতিষ্ঠান কাজ পেলে সেখানে কোনো জবাবদিহি থাকে না এবং স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ থাকে। এ ছাড়া চুক্তির প্রক্রিয়া নিয়েও কথা বলেছেন অনেকে। এআরএস