সোমবার | ২৬ মে, ২০২৫ | ১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বেশি দিন চললে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ’

নিজস্ব প্রতিবেদক: দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বেশি দিন চললে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আমাদের রাজনীতিতে, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি প্রস্তাব রাখবো, অধ্যাপক ড. ইউনূস যেন সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
শনিবার (১০ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণ নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ইতিহাস যুদ্ধ করে না। যুদ্ধ করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। কিন্তু ইতিহাসের দরকার আছে। ইতিহাসকে বাদ দেওয়া যাবে না। নতুন ইতিহাস লিখতে হলে পুরোনো ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। এ ইতিহাসের রাজনৈতিক দিক হচ্ছে… ভারতীয় গণমাধ্যমেই দেখেছি যে, ভারতে সামনে দুটা নির্বাচন আছে। বিহার ও পশ্চিববঙ্গে। দুটাই রাজনৈতিক দিক থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য চ্যালেঞ্জ। এ যুদ্ধ পাকিস্তানকেও রক্ষা করতে পারে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা কিন্তু নির্বাচিত নন। ইমরান খান এখন জেলে। তার এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইমরান খানের রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দেরও ফয়সালা হয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী সামনের কাতারে চলে আসছে। পাকিস্তানের জনগণ এখন কী বলবে? তারা বলবে দেশ রক্ষা করেছে আমাদের সেনাবাহিনী। সেই কারণে দুই দিকেই রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। রাজনীতি বাদ দিয়ে ঐতিহাসিক কারণ লেখা যাবে না। আর ইতিহাস লিখতে হলে রাজনীতি লিখতে হবে।

মানবজমিন প্রধান সম্পাদক বলেন, এবারের যুদ্ধের দুটো দিক। ভুয়া সংবাদ অন্যতম। আরেকটা হচ্ছে এআই। আমরা নিজেরা যাচাই বাছাই করে দেখতে পাচ্ছি এবার যুদ্ধ হচ্ছে এআই’র মাধ্যমে। এটার একটা ব্যবসা আছে। এ যুদ্ধ যদি চলতে থাকে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এ যুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে বেশি। কারণ আমাদের কোনো একটা বক্তব্য কোনো একটা সিদ্ধান্ত স্পর্শকাতর কোনো বিষয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যেটা আমরা আশা করি না। আমরা আশা করি যে, আমরা সতর্ক থাকবো। পুশইন চলছে। পুশইনকে বাধা দিতে গিয়ে আমরা এমন কোনো কাণ্ড না ঘটাই যেটা সামাল দিতে পারব না।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ভারত অধ্যুষিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু যেমন দুঃখজনক, তেমনই ভারতের হামলায় পাকিস্তানের বেছে বেছে মসজিদ ধ্বংস করাসহ ৩২ জন বেসামরিক নাগরিক হত্যা করার যে অভিযোগ উঠেছে তাও দুঃখজনক। পেহেলগাম হামলায় নিহতের ঘটনায় ভারত পাকিস্তানেকে দায়ী করেছে। তবে পাকিস্তান এ অভিযোগকে অস্বীকার করে ভারতের সাজানো নাটক বলে দাবি করেছে। ভারত বিশেষ ফায়দা অর্জনের জন্য এই ধরণের নাটক সাজিয়েছে বলে পাকিস্তানের দাবি।

৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যে সকল মসজিদ ধ্বংস হয়েছে সেই সব মসজিদেই ঐদিন পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ব্লাক আউটের মধ্যেই সংহতি প্রকাশের জন্য ফজরের ওয়াক্তে একত্র হয়েছিল পুরো এলাকার বাসিন্দারা। এ পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকে কোনো উসকানিতে মুসলিম-হিন্দুর যুদ্ধ হিসেবে বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না। তবে বিজেপি সরকার কর্তৃক ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করে ভারতীয় মুসলমানদের স্বস্তি প্রদান করা উচিত। তাই এই দুই দেশে অবস্থানকারী মুসলমান ও হিন্দুরা যার যার অবস্থান থেকে ধর্মীয় উত্তেজনা পরিহার করে এ যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করা উচিত। তা না হলে বিশ্ব এই দুই পারমাণবিক শক্তির সংঘাতের ভার বইতে পারবে না।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি বজায় থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বিশাল প্রভাব পড়বে। আমাদের আমদানি রপ্তানী ব্যাহত হবে, সাপ্লাই চেইন নষ্ট হবে, পুঁজিবাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিবে, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান থেকে আমদানীকৃত পণ্যের মূল্য বাড়বে, ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করার জন্য সময় এবং বিমান ভাড়া দুটোই বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে সেই আগুনের উত্তাপ নিজের গায়েও লাগবে। দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলাকালীন অবস্থায় বিএসএফ খাগড়াছড়ি, কুড়িগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, চুয়াডাঙ্গা এই পাঁচ জেলার সীমান্ত দিয়ে ১৬৭ জন ভারতীয় নাগরিককে পুশইন করেছে। যাদের বিএসএফ রোহিঙ্গা বলে দাবি করছে। বিএসএফ পুশইনের চেষ্টা আমাদের জন্য নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সীমান্তের শিলিগুড়ি করিডোরের চিকেন নেক অঞ্চলে বিএসএফ বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ফলে বাংলাদেশের সীমান্ত জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে তা মোকাবিলা করতে আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা জরুরি।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের মূল কারণ রাজনৈতিক নয় ঐতিহাসিক’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ’র বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় বিরোধী দল হিসেবে বিজয়ী হয় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন সাংবাদিক মাঈনুল আলম, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক এ কে এম মঈনুদ্দিন, কবি জাহানারা পারভিন ও সাংবাদিক মিজানুর রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM