হাসান শান্তনু : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্যের ইমামতিতে শিক্ষার্থীরা নামাজ পড়েছেন, এটা দোষের কিছু নয়। ধর্মচর্চার অধিকার মানুষের নিঃসন্দেহে নিষ্পাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত ইমাম না থাকায় কোনো অধ্যাপক, বা শিক্ষকের ইমামতিতে নামাজ পড়ার রেকর্ড দেশে আছে। ইমামতি করেছেন বলে তাঁকে এখনই ‘সফল উপাচার্য’ বলা যাবে না। উপাচার্যের মূল দায়িত্ব ইমামতি নয়। তাঁর ইমামতির বিষয়টির বাড়তি প্রচারণা যেমন অনর্থক অপ্রয়োজনীয়, তেমনই এতে উপাচার্যের ‘নৈতিক ও মূল্যবোধের ঘাটতি’ প্রকাশের কোনো দিক নেই। সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করবেন। তিনি রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি মূল্যবোধ, নৈতিকতার চর্চায় জনগণের অনুকরণীয় হবেন। লজ্জাজনক হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু প্রকাশ্যে এক নারীর ছবিতে ফেসবুকে লেখেন, ‘নাইস এন্ড অ্যাট্রাকটিভ’ (সুন্দরী ও আকর্ষণীয়া)।
আকর্ষণীয়া শব্দটি যৌনগন্ধী। এতে কামবাসনা প্রকাশ হয়। রাষ্ট্রপতি হিসেবে চুপ্পু কোনো পরনারীকে প্রকাশ্যে তা বলতে পারেন না। বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল দেশেরই শুধু নয়, খোলামেলা চরিত্রের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিও প্রকাশ্যে, বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরনারীকে ‘আকর্ষণীয়া’ বলে মন্তব্য করলে সেখানে হুলস্থুল পড়ে যেতো। দেশের সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে ‘অনুকরণীয় মূল্যবোধের অধিকারী’ বানালেও বাস্তবক্ষেত্রে আমরা তা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। রাষ্ট্রপতি থাকাকালে প্রয়াত এইচ এম এরশাদ অন্যের কলেমা পড়া বউয়ের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করাকে যথারীতি ‘শিল্পের’ পর্যায়ে টেনে নেন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও এরশাদকে এসব কারণে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।
এরশাদের পরকীয়ার কারণে একাধিক সংসার ভেঙেছিলো। তিনি কতো প্রেম করেছিলেন রাষ্ট্রপতি থাকাকালে, এর অনুমান করা যায় তার সাবেক প্রেমিকা জিনাত মোশারফের একটা মন্তব্য থেকে। জিনাত বলেছিলেন, ‘এরশাদের শুক্রাণুর সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা থাকলে এ দেশ কচিকাঁচার আসরে ভরে ওঠতো’। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার থাকাকালে যে লুটপাট, দুর্নীতি করেছেন, এর জন্য তার বিচার হওয়া উচিত। চুপ্পু তখন তালিকা করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে চিঠি দিতেন যে, দুদক তার সম্পদের অনুসন্ধান করবে। ওই চিঠির কপি প্রথমে ছাপা হতো মহাবাটপাড় হিসেবে কুখ্যাত এরতেজার ভোরের পাতা পত্রিকায়। এরপর ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নিতেন চুপ্পু, এরতেজাও ভাগ পেতেন। ধান্ধাবাজ এরতেজা তখন চুপ্পুকে দুলাভাই ডাকতেন। বিষয়গুলোর তদন্ত হওয়া উচিত, অন্তত রাষ্ট্রপতির পদকে বিতর্কের উর্দ্ধে রাখার স্বার্থে হলেও।❞
(লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া। হাসান শান্তনু বাংলাদেশের মূলধারার একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক)