শুক্রবার | ৯ মে, ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ, ১৪৩২

চিংড়ি বাদ দিয়ে ধান চাষে ফিরেছেন কয়রার এক হাজার কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস: ‘দীর্ঘ ২০ বছর বছরের মধ্যে ধানের মুখ চোখে দেখিনি। এবার নিজের খেতে ধান দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। বিলে নোনাপানির চিংড়িঘেরের কার্যক্রম বন্ধ না করা হলে এবারও হয়তো ধানের মুখ চোখে দেখতাম না।’ কথাগুলো বলছিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার নয়ানী গ্রামের কৃষক সুনীল মৃধা।

আরেক কৃষক বিকর্ণ মণ্ডল বলেন, ‘চিংড়ি চাষে এখন আগের মতো লাভ হয় না। প্রতিবছর দুবার মরে ভাইরাসে। উৎপাদনও ভালো না। সেই সঙ্গে দামেরও হেরফের রয়েছে। সব দিক বিবেচনায় ভেবেচিন্তে সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম ধান চাষের। অনেক দিন পর জমিতে ধান লাগাতে পেরে ভালো লাগছে।’

এই কৃষকেরা জানান, বিলে প্রায় এক হাজার কৃষকের জমি থাকলেও সেসব জমি ইজারা নিয়ে চিংড়ির ঘের করতেন ২০০ মানুষ। প্রায় তিন হাজার বিঘা জমিতে ২০০৩ সাল থেকে নোনাপানি তুলে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। সারা বছর নোনাপানিতে ভরা থাকত বিল। পাশের জমিতে নোনাপানি থাকায় ছোট জমির মালিকেরা বাধ্য হয়ে তাঁদের জমিতেও ধানের বদলে চিংড়ি চাষ শুরু করেন। ধীরে ধীরে জমির লবণাক্ততা বসতভিটাতেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ফলে সেখানে শাকসবজিও লাগাতে পারতেন না কেউ।

চিংড়ি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া গ্রামের আরেক কৃষক মনমোহন মণ্ডল বলেন, ‘বিলে আমার চার বিঘা জমি থাকার পরও পাঁচজনের সংসারে চালের চাহিদা মিটত না। বাড়িতে তরিতরকারিও লাগাতে পারতাম না। সবকিছুই বাজার থেকে কিনতে হতো। এবার নোনাপানি বন্ধ করে ধান চাষের সঙ্গে সবজি চাষাবাদ করতে পেরে আমি খুশি।’

তবে ধানচাষিরা অভিযোগ করেন, এ মুহূর্তে কিছু কিছু জায়গায় ধানের পাতা লালচে হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি অফিসের কারও পরামর্শ পাচ্ছেন না তাঁরা। তা ছাড়া চাষাবাদের শুরুতেও কৃষি অফিসের সহযোগিতা পাননি কোনো কৃষক।

অনাদি সরকার, সমীরণ মৃধা, নান্টু রায়, দীপক মণ্ডল, সুকুমার মণ্ডল, কুমারেশ মণ্ডলসহ বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা বাজারের কীটনাশকের দোকানে বসে থাকেন। তাঁরা কৃষকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে কেউ মাঠে যান না। কোনো দরকারে তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলে তাঁরা বিশেষ বিশেষ কোম্পানির কীটনাশক কিনতে পরামর্শ দেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মণি রায় জানান, চিংড়ি চাষ ছেড়ে এলাকার কৃষকেরা ধান চাষের আগ্রহ প্রকাশ করলে বিষয়টি নিয়ে ইজারাদার ও ঘেরমালিকদের নিয়ে আলোচনা হয়। সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বছরের শুরুতেই প্রথমে নদী থেকে নোনাপানি উত্তোলনের পাইপগুলো অপসারণ করা হয়। পরে বৃষ্টির পানিতে আমন চাষাবাদ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর ধান চাষ করতে পেরে প্রতিটি কৃষক পরিবারে স্বস্তি ফিরেছে। কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা পেলে অনেকেই নোনাপানির চিংড়ি চাষ ছেড়ে ধান চাষে আগ্রহী হবেন বলে মনে করেন তিনি।

কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস বলেন, অনেক স্থানে নোনাপানির চিংড়ি চাষ ছেড়ে ফসল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে নয়ানী এলাকায় নতুন করে ধান চাষাবাদ শুরুর বিষয়টি জানা ছিল না। এখন থেকে ওই এলাকার দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে কৃষকদের খোঁজখবর রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM