নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন লিয়াজো কমিটির ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সুসংহতকরণের লক্ষ্যে ন্যূনতম এক মাস বা পরিস্থিতি অনুযায়ী আরও বেশি সময় সব ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসগুলোতে নিজেদের আলাদা করে কোনও কর্মসূচি দেবেন না। বরং এ আন্দোলনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে রক্ষা করার জন্য এবং সব ধরনের প্রতিবিপ্লব রুখে দেওয়ার জন্য লড়ে যাবেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংহতকরণ, ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিতকরণ ও ১৫ আগস্টে জাতীয় শোক দিবস পালন না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত শীর্ষক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে কোনও ছাত্র ক্যাম্পাসে বা অন্য কোথাও কারও ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, হুমকি কিংবা ট্যাগ-ব্লেইম দিতে পারবে না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের কোনও কর্মী বা নেতা ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবে না।
এছাড়া ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন না করার বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উপস্থিত সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি এসব সিদ্ধান্তের সঙ্গে লিখিতভাবে একমত পোষণ করেন।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকালে লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, সোমবার (১২ আগস্ট) ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে সুসংহত করার লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে লিয়াজোঁ কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
ছাত্রলীগ (সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন’) ও ছাত্রসমাজ ছাড়া বাংলাদেশের সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন বলে জানান আদীব। তিনি উল্লেখ করেন, ‘সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন। লিয়াজোঁ কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন—সমন্বয়ক মাহফুজ আলম, সদস্য নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী ও আরিফুল ইসলাম আদীব।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ছাত্র রাজনীতির ধরন ও প্রকৃতি নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে এই অন্তর্বর্তী সময়ে সংলাপ অব্যাহত থাকবে। ফলে, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চলবে কিনা, সে বিষয়ে আন্দোলন অব্যাহত থাকা পর্যন্ত আলোচনা স্থগিত থাকবে। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা থাকবে না।
‘জাতীয় শোক দিবস নিয়ে বিরোধিতার ব্যাখ্যায় বলা হয়, যেহেতু ১৫ আগস্টকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকে রূপান্তর করা হয়েছে এবং এ দিবসকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পুনরায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে— তাই জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা ও অভ্যুত্থান সংহত করার লক্ষ্যে ১৫ আগস্টকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করাটা সমীচীন নয়। নেতারা জুলাই-আগস্টকে বাংলাদেশের জনগণের শোক, সংহতি ও প্রতিরোধের মাস হিসেবে সাব্যস্ত করেন।
লিয়াজোঁ কমিটির উদ্যোগে মতবিনিময় সভায় যেসব ছাত্রসংগঠন অংশগ্রহণ করেছে ও মতৈক্যে পৌঁছেছে, সেগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ( রাগিব-নাঈম), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (মুক্তি কাউন্সিল), বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (ইউপিডিএফ), বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (জেএসএস), বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ (নুর), বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষ, ছাত্র আন্দোলন (এনডিএম), বিপ্লবী ছাত্রসংহতি, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া), বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম-মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্র সমাজ (কাজী জাফর), জাগপা ছাত্রলীগ (খন্দকার লুৎফর), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র সমাজ, বাংলাদেশ ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্রসমাজ, বাংলাদেশ ছাত্রমিশন, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল ও জুম লিটারেচার সোসাইটি।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আব্দুল্লাহ, পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, মিডিয়া ও তথ্য অ্যাফেয়ার্স আরিফুল ইসলাম আদীব বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।