জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুর: কৃষিকাজ কিংবা ব্যবসা কোনো কিছুতেই পোষাতে পারছিলেন না ফরিদপুরের তরুণ মো. রিয়াজ মুন্সী (২০)। উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যাওয়ার জন্য অবৈধপথ বেছে নিয়ে দালালের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তিতে লিবিয়া যান তিনি। তবে সেটি দুঃস্বপ্ন হয়ে দেশে ফিরেছে তার মরদেহ।
সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত রিয়াজের পরিবারের কাছে মৃতদেহটি তুলে দিয়েছে পুলিশ। নিহত রিয়াজ ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের চরবল্লভদী গ্রামের কৃষক মো. ইউনুস মুন্সীর ছেলে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
তার পরিবার সুত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে দালালরা তাকে ইতালি নেওয়ার জন্য নৌকায় করে প্রথমে লিবিয়ায় নিয়ে যান। সেখানে টানা কয়েকমাস তাকে আটকে রেখে চুক্তির ১৫ লাখ টাকা নেওয়ার পরেও আরও ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয় রিয়াজের পরিবারের কাছে। টাকা না পেয়ে দালালরা তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালাতে থাকে।
রিয়াজের স্বজনরা জানান, চুক্তির ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার পর আবারও ১৫ লাখ টাকা না দেওয়ায় লিবিয়ায় রিয়াজকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে হত্যা করেছে দালালরা। গত রোববার (০৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রিয়াজের নিথর দেহ বিমানে করে দেশে পৌঁছায়। সোমবার সকালে রিয়াজের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে সালথায় তার বাড়িতে মরদেহটি পাঠানো হয়েছে।
রিয়াজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভাবের সংসারে হাল ধরতে রিয়াজ প্রথমে কৃষিকাজ করতেন। এতে বেশি আয় করতে না পেরে ব্যবসা শুরু করেন। তাও পোষাতে পারেননি তিনি। পরে ইতালি যাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। পাশের মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের শাহিন খার ছেলে দালাল শাকিল খার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার চুক্তি করেন তিনি। চুক্তি অনুযায়ী ধার-দেনা করে ১৫ লাখ টাকা দালাল শাকিলের হাতে তুলে দেয় তার পরিবার।
এরপর গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে দালাল শাকিল লিবিয়ায় অবস্থারত আরেক দালাল নগরকান্দা উপজেলার গজারিয়া গ্রামের সালাম কাজীর ছেলে কারী আল আমিনের মাধ্যমে রিয়াজকে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সেখানে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে আরও ১৫ লাখ টাকা দাবি করে রিয়াজের ওপর নির্যাতন করা হয়। একপর্যায় দালালদের নির্যাতনে রিয়াজের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ১৫ দিন আগে রিয়াজের ভাই রাকিব মুন্সী বাদী হয়ে মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা দালাল শাকিল খাসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় মানবপাচার আইনে একটি মামলা করেন। নিহত রিয়াজের মরদেহ দেশে আসার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে তার পরিবার ও স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাড়ির পরিবেশ।
মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল আলম বলেন, রিয়াজের মরদেহ লিবিয়া থেকে আসার পর সেটির ময়নাতদন্ত করে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কিছুদিন আগে থানায় একটি মানবপাচার মামলা হয়েছিল। রিয়াজের হত্যার পর ওই মামলাটি হত্যা মামলায় রূপাতিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে এ মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।