মঙ্গলবার | ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৫ ফাল্গুন, ১৪৩১

বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের চিরাচরিত ধারণা পালটাতে হবে

একেএম শামসুদ্দিন: গত জাতীয় নির্বাচনের পর সরকার গঠনের সাত মাস শেষ না হতেই শেখ হাসিনার এমন পতন ঘটবে ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবেনি। ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা দোর্দণ্ডপ্রতাপের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতি যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন, তাতে জুলাইয়ের গণ-আন্দোলন ভালোভাবেই সামাল দিতে পারবেন, এ ধারণা অনেকেরই ছিল। এ বিষয়ে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র ভারতও ব্যতিক্রম নয়। এটি সবারই জানা, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের যত না ঘনিষ্ঠতা, এর চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে। ভারত মনে করে, সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ হলো তাদের গুরুত্বপূর্ণ ঘনিষ্ঠ মিত্র। তবে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশের চেয়ে শেখ হাসিনাকেই তারা বেশি মিত্র মনে করত। হাসিনা ভারতের কাছে শুধু ঘনিষ্ঠ মিত্রই ছিলেন না, তাকে কৌশলগত অংশীজনও মনে করতেন তারা। বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলোয় সশস্ত্র বিদ্রোহী দমনে শেখ হাসিনা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাতে তিনি যে ভারতের কৌশলগত অংশীজন ছিলেন, তাই প্রমাণ করে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর জাতিগত বিদ্রোহীদের দমন করতে ভারতের তেমন বেগ পেতে হয়নি। হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশে ভারতের একচেটিয়া বাণিজ্যের বিকাশও ঘটে। ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় পণ্য পরিবহণের জন্য বাংলাদেশের সড়ক ও নদী ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিক লাভের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরও ব্যবহার করছে। সর্বশেষ ভারতের নিরাপত্তা আরও সুসংহত করতে শিলিগুড়ি করিডর (চিকেন নেক নামে খ্যাত) এড়িয়ে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সামরিক সরঞ্জাম ও বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহণের জন্য রেল করিডর পাওয়ার সুবিধাও আদায় করে নিয়েছিল শেখ হাসিনার কাছ থেকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, গত বছর সেপ্টেম্বরে ভারত সফরকালে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার বিনিময়ে শেখ হাসিনা ভারতকে রেল করিডর, তিস্তা প্রকল্প এবং পশ্চিমবঙ্গের হিলি ও মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জের মধ্যে একটি প্রশস্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর ফলও শেখ হাসিনা হাতেনাতে পেয়েছেন। ২০২৪ সালের সাজানো নির্বাচনে শুধু সমর্থনই দেয়নি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শেখ হাসিনার ওপর চাপ কমানোর জন্য ভারত যুক্তরাষ্ট্রকেও ম্যানেজ করেছিল; কিন্তু হাসিনার আকস্মিক গদিচ্যুতির ঘটনায় ভারতের এসব মহাপরিকল্পনা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনার আমলে ‘র’ বাংলাদেশে খুবই সক্রিয় ছিল। বাংলাদেশে ‘র’-এর কার্যক্রম অনেকটা ওপেন সিক্রেট ছিল। এ নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। ভারতীয়রাও মনে করেন, ভারতের স্বার্থেই বাংলাদেশে ‘র’-এর সক্রিয় কার্যকলাপ বজায় থাকা উচিত। ভারত এদেশের জনগণকে সবসময় অবজ্ঞার চোখেই দেখে এসেছে। বাংলাদেশের মানুষ যে এদেশের মাটিতে কোনো আধিপত্যবাদী শক্তিকে বরদাশত করে না, তা ভারত মানতে রাজি নয়। তাদের এমন মনোভাবের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই সে দেশের চিন্তাবিদ ও বিশ্লেষকদের লেখা বিভিন্ন প্রতিবেদন, বক্তব্য ও বিবৃতিতে। তাদের বক্তব্য শুনে মনে হয়, শেখ হাসিনার ভরাডুবি মানে তাদেরও ভরাডুবি। একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ১১ আগস্ট ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিমাংশু সিংহ কলকাতার ‘দৈনিক বর্তমান’ পত্রিকায় এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের দ্রুত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা ব্যর্থতাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, বিদেশের মাটিতে সম্ভ্রম জাগানো ‘র’ তাহলে কী করছিল, বিন্দুবিসর্গও কি টের পায়নি?’ হিমাংশু সিংহ শ্রীলংকার রাজাপাকসে পরিবারের পতনের উদাহরণ টেনে লিখেছেন, ‘এবার বাংলাদেশে হাসিনার আচমকা পতন এবং কোথাও আশ্রয় না পেয়ে প্রাণভয়ে দিল্লিতে পালিয়ে আসা এপারের অস্বস্তি বাড়াতে বাধ্য। ভারত সরকার যখন হাসিনাকে আশ্রয় দিতে পারল, তাহলে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ যে দ্রুত মুজিবকন্যার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, সেই ব্যাপারে আগাম সতর্ক করতে পারল না কেন?’ উপরের বর্ণিত বিষয়টি আমি অন্য এক নিবন্ধেও উল্লেখ করেছিলাম।

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের পরবর্তী পরিকল্পনা কী, তা নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ আছে বৈকি। বাংলাদেশ বরাবরই ভারতের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়; কিন্তু বাংলাদেশ চাইলে কী হবে! এ বিষয়ে ভারতকেও আগ্রহ দেখাতে হবে। অভিজ্ঞতা বলে, ভারত নিজেদের গণতান্ত্রিক দেশ দাবি করলেও বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের চর্চা হোক, তা কোনোদিনও চায়নি। তারা চেয়েছে ভারতের স্বার্থরক্ষা করবে এমন দল ক্ষমতায় আসুক। সেটি গণতান্ত্রিকভাবে আসুক কিংবা অন্য কোনো পথে। তারা বরাবরই ভারতের প্রতি অনুগতদেরই পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছে। সে হিসাবে শেখ হাসিনাই তাদের ফার্স্ট চয়েজ। হাসিনা ও তার দলের অনুসারীরা ১৫ বছর ধরে ভারতের সব আবদারই রক্ষা করে এসেছে। ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে তারা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতেও পিছপা হয়নি। এ কারণেই হয়তো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্রোতে ভেসে গিয়ে শেখ হাসিনা যখন ভারতের আশ্রয় চেয়েছেন, ভারতও ফিরিয়ে দিতে পারেনি। ভারত সাগ্রহে তাকে বরণ করে নিয়েছে।

শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এক মাস হলো। সম্প্রতি দিল্লির বিমানঘাঁটি এলাকা থেকে সরিয়ে শেখ হাসিনাকে দক্ষিণ দিল্লির একটি বেসরকারি আবাসিক এলাকায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে শোনা গেছে। যে এলাকায় হাসিনাকে রাখা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, সে এলাকার কেউ এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারে না। তবে অন্য সূত্র বলছে, শেখ হাসিনাকে বেসামরিক এলাকায় নয়, ভারতের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর সুরক্ষিত একটি ভবনে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ভারত সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা বাংলাদেশের রাজনীতি ও পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। ভারতের বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ‘র’-প্রধান স্বয়ং শেখ হাসিনার দেখাশোনা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

ভারত বাংলাদেশ থেকে যেসব সুবিধাভোগ করে আসছে এবং ভবিষ্যতে সুবিধা পাওয়ার আশায় বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রেল করিডর ব্যবস্থা। ভবিষ্যতে যদি কখনো অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে অথবা উত্তর-পূর্বাঞ্চল সীমান্ত বরাবর চীনের সঙ্গে ভারতের সামরিক সংঘর্ষ হয় অথবা উত্তর-পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলোয় বিদ্রোহীদের দমনে সামরিক জনবল এবং সরঞ্জমাদি দ্রুত পরিবহণের প্রয়োজন পড়ে, এ রেল করিডর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলেন, এ কারণেই শেখ হাসিনা হয়তো রেল করিডরসংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তিতে ভারতকে কী কী সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে দেশবাসীকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেছিলেন। শোনা যায়, রেল করিডরসংক্রান্ত ফাইলটি স্বাক্ষরের পর শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর না করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ফলে রেল করিডরসংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ভারত মনে করছে। হিলি-মহেন্দ্রগঞ্জ সংযোগ সড়কসহ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ন্যূনতম তেরোটি পয়েন্টে রেল যোগাযোগব্যবস্থার যে স্বপ্ন ভারত দেখেছিল, শেখ হাসিনার পতনের ফলে সে স্বপ্ন একেবারে ভেঙে গেছে। বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এ সমঝোতা চুক্তি বাস্তবায়ন করবে কি না, এ নিয়ে ভারত সন্দিহান হয়ে পড়েছে। তাদের ধারণা, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে না আসা পর্যন্ত এ চুক্তি বাস্তবায়ন হবে না। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের বিকল্প নেই। ধারণা করা যায়, এ উদ্দেশ্য সামনে রেখেই ভারত তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করবে।

গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে দু-একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করার জন্য ‘র’ ইতোমধ্যে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করেছে। তাদের প্রাথমিক কাজ হবে, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এ মুহূর্তে অত্যন্ত জনপ্রিয়; এসব তরুণ নেতা যেন নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে না পারে, তেমন পরিস্থিতি তৈরি করা। এমনিতেই নতুন দল হবে অনেক বেশি তারুণ্যনির্ভর; অতএব দল গঠন করতে গিয়ে এ গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে যদি বৃহত্তর পরিসরে গ্রহণ করা হয়, তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ ভারতবিরোধী রাজনৈতিক দল। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসনে ‘র’-এর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, লক্ষ্য অর্জনে ‘র’ খুব সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে এগোনোর চেষ্টা করবে। এজন্য তারা যা করতে পারে তা হলো, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন অবসানের পর মানুষের মনে দেশ নিয়ে যে আশার সঞ্চার হয়েছে, তা নষ্ট করে দেওয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর দেশবাসী যে আস্থা রেখেছে, তা দুর্বল করে দেওয়া। শেখ হাসিনার প্রস্থানের পর দেশে দলমতনির্বিশেষে বিভিন্ন ইসলামিক দলসহ সব দলের সুষ্ঠু রাজনীতি করার যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে পুঁজি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে মানুষের মনে বিভ্রান্তি ছড়ানো। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইসলামিক দলগুলো দ্বারা প্রভাবিত বলে প্রচার করে সরকার সম্পর্কে মানুষের মনে সন্দের ঢুকিয়ে দেওয়া। পাশাপাশি অতি গোপনীয়তার সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আওয়ামী চিন্তাধারার ব্যক্তিদের বসিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করা। তারপর একসময়, আওয়ামী লীগকে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে নিয়ে আসা।

তবে তাদের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা এত সহজ হবে না। ভারত বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যখন কথা বলে, তখন এদেশে সংঘটিত গণহত্যার কথা খুব সচেতনভাবেই এড়িয়ে যায়। গত ১৫ বছরের ব্যাপক দুর্নীতি-রাহাজানি, গুম-খুনের কথা বাদ দিলেও শুধু এ গণ-আন্দোলনেই শত শত মানুষকে হত্যা করে যে অপরাধ করেছেন, সে অপরাধ থেকে শেখ হাসিনা ও তার নেতাকর্মীরা কোনোক্রমেই রেহাই পাবেন না। যদিও এ বিষয়টি নিশ্চিত হবে আদালতের মাধ্যমে। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ দেশে রাজনীতি করতে হলে অবশ্যই তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তও তাই। বিচার নিশ্চিত করার আগে তাদের পুনর্বাসনের সুযোগ নেই বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। যদিও সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবুও বিচারের আগে তারা রাজনীতি করতে পারবেন কি না, এ বিষয়টি জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণ এটি নির্ধারণ করবে কীভাবে? এক্ষেত্রে প্রয়োজনে দেশব্যাপী গণভোট দেওয়া যেতে পারে। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ জানিয়ে দেবে, বিচারের আগে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি না।

বাংলাদেশে ভারতের রাজনীতি পরাজিত হলেও সার্বিক বিবেচনায় তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া কোনো বিকল্পও নেই তাদের হাতে। আগেই বলেছি, বাংলাদেশও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। তবে এক্ষেত্রে ভারতের সুপ্রতিবেশীমূলক আচরণ হবে সম্পর্কোন্নয়নের পূর্বশর্ত। ভারতকে আধিপত্যবাদী চিন্তাচেতনা থেকে বেরিয়ে এসে অবশ্যই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশে ‘র’-এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে যে তথ্য বেরিয়েছে, সে বিষয়েও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। বাংলাদেশে আর কোনো সংকট না বাড়িয়ে ভারত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অকৃত্রিম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে আমরা আশা করি। এ প্রসঙ্গে ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে সম্প্রতি দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উক্তি উল্লেখ করে লেখাটি শেষ করতে চাই; ‘হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের সবাই ইসলামি রাজনৈতিক শক্তি, এমন ভাবনা থেকে ভারতকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে গুরুত্ব দেয়। এ অবস্থায় নয়াদিল্লিকে অবশ্যই চিরাচরিত ধারণা ত্যাগ করতে হবে।’ এর সঙ্গে আরও একটি প্রত্যাশা ব্যক্ত করতে চাই, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত যদি সত্যিই সুসম্পর্ক চায়, তাহলে গণহত্যায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব উপলব্ধি করে ভারত সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে।

একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কলাম লেখক

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM