নিজস্ব প্রতিবেদক: খাগড়াছড়ি ও নরসিংদীর পরে নাটোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভায় হট্টগোল, হাতাহাতি, মারামারি এমনকি বিএনপির সঙ্গেও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে। দেশব্যাপী মতবিনিময় সভার শুরুতেই এমন বিভক্তি ও প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মতবিনিময়কালে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এরে আগের রাতে নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে বিএনপির সংঘর্ষে অন্তত: ২০জন আহত হয়েছেন। জেলা প্রতিনিধিরা পাঠিয়েছেন সংঘর্ষ ও হাতাহাতির খবর।
নাটোরে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি: জেলা সংবাদদাতা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মতবিনিময়কালে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে শহরের অনিমা চৌধুরী অডিটরিয়ামে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. মাহিন সরকার, কুররাতুল আইন কানিজ, ইফতেখার আলম, ফয়সাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, অনিমা চৌধুরী অডিটরিয়ামে ছাত্র আন্দোলনে নাটোরে নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আলোচনা শুরু হলে অন্য গ্রুপের শিক্ষার্থীরা সেখানে ঢুকে পড়েন। রপর সবাইকে চেয়ারে বসতে বলা হলে উল্টো আয়োজকদের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে পড়েন তারা। এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েও ব্যর্থ হন। পরে খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষের দাবি, যারা প্রকৃতপক্ষে নাটোরের আন্দোলনে আহত হয়েছে তাদের আজকের আয়োজনে না রাখায় ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তারা ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে নাটোরের কয়েকজন ছাত্রের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার প্রতিবাদও করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী এবং পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইনকে কল করলেও কেউ রিসিভ করেননি।
নরসিংদীতে বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ২০: জেলা সংবাদদাতা জানান, পলাশে হাটবাজার পরিচালনা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৫ জনকে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।মঙ্গলবার রাতে পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর বাজারে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে চরসিন্দুর ইউনিয়নের কলার হাট ও পশুর হাট পরিচালনা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে ইউনিয়ন বিএনপির কিছু নেতাকর্মীদের বিরোধ চলছিল। গতকাল সাপ্তাহিক হাট চলাকালীন শিক্ষার্থীরা হাটে অবস্থান নেয়। পরে সন্ধ্যার পর বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী হাটে অবস্থান নিতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে দু’পক্ষের ২০ জন আহত হয়। গুরুতর আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা জানায়, আওয়ামী লীগ পতনের পর চরসিন্দুর বাজারে চাঁদাবাজী শুরু করে স্থানীয় বিএনপির নেতা কর্মীরা। পুরো বাজারই দখল করে নেয় তারা। এই বাজার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রদের কাউকেই বাজারে আসতে দেবে না বলে জানায় বিএনপির লোকজন। আমরা ছাত্ররা বাজারের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে যাওয়ায় আমাদের উপর এই হামলা করেছে তারা। আমরা এই হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকতিয়ার উদ্দিন জানান, সাপ্তাহিক হাট পরিচালনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কোন পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ থানায় আসেনি।