বিদেশ থেকে বৈধভাবে সোনা আমদানি বাড়ছে। বছরে দেশে নতুন সোনার চাহিদা ১৮ থেকে ৩৬ টন। অথচ ২০২২ সালেই বৈধভাবে দেশে সোনা এসেছে অন্তত ৫৪ টন। চাহিদার সোনার হিসাব করলেও দেখা যায়, ৩৬ টন সোনার ওজন কমপক্ষে সাড়ে ৩০ লাখ ৮৬ হাজার ভরি।
বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী এর দাম প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০২২ সালে ঢাকা কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা অভিযানেও আটক হয়েছে আনুমানিক এক টন। তবে অবৈধভাবে আসা বেশির ভাগই ধরা পড়ে না। বিপুল পরিমাণ সোনা এলেও তা দেশে থাকছে কি না এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এ বিপুল পরিমাণ অর্থের সোনার পুরোটাই অন্য দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলেই আশঙ্কা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদেশ থেকে যে পথেই সোনা আসুক না কেন, তাতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংকটের সময়ে এভাবে সোনা আমদানির সুযোগে দুইভাবেই ডলারের প্রবাহ কমছে। একদিকে দেশ থেকে ডলার নিয়ে গিয়ে পর্যটকরা বিদেশ থেকে সোনা কিনে সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন।
আবার একটি চক্র বিদেশে প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করে, তাদের হুন্ডিতে ওই পরিমাণ টাকা দিয়ে দেয়। আর সংগ্রহ করা ডলার দিয়ে সোনা কিনে তা দেশে নিয়ে আসছে। অথচ এই বিপুল সোনার চাহিদাও দেশে নেই। এতে বিশাল অঙ্কের ডলার হারাচ্ছে দেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানযাত্রীরা ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় সোনার একটি বড় অংশ বৈধপথেই আনছেন।
কিন্তু তাঁরা সোনার বদলে বৈদেশিক মুদ্রা আনলে তা দেশের ব্যাংকব্যবস্থায় যুক্ত হতো। তখন এই মুদ্রা বর্তমান সংকট কাটাতে সহায়ক হতো। দেশের বাজারে এখন ২২ ক্যারেট মানের সোনার ভরি এক লাখ ২৬ হাজার ৩২১ টাকা।
সাম্প্রতিক চোরাচালানের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিদের কাছে জনপ্রিয় রুট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ সোনা চোরাচালান হচ্ছে। এতে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে দেশ।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফখরুল আলম বলেন, সোনা চোরাচালানি ঠেকাতে শুল্ক গোয়েন্দা সব সময় তৎপর আছে। আমরা বিজিবি, আর্ম ফোর্সেস, সোর্সসহ সব স্টেকহোল্ডারকে সঙ্গে নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করছি। এ জন্য সাম্প্রতিক সময়ে বিমানবন্দরসহ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সোনা বেশি ধরা পড়ছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে প্রায় সাড়ে সাত টন সোনা আটক হয়েছে। তবে বরাবরই অধরা থাকে বড় চালানগুলো। খাতসংশ্লিষ্টরা ধারণা করে জানান, দেশের তিনটি বিমানবন্দরে অবৈধভাবে প্রবেশকৃত যে পরিমাণ সোনা ধরা পড়ে, তা প্রকৃত চালানের ১০ শতাংশেরও কম।
এদিকে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) হিসাবে, বছরে ১৮ থেকে ২০ টন নতুন সোনা দরকার হয়। অবশ্য সোনা নীতিমালা (২০১৮) অনুযায়ী, দেশে বছরে সোনার চাহিদা ১৮ থেকে ৩৬ টন। সে হিসাবে দেশে শুল্কায়ন হয়ে যে পরিমাণ সোনা ঢুকছে তা চাহিদার তুলনায় দেড় থেকে তিন গুণ বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যে পরিমাণ সোনা ঢুকছে, তা আসলে দরকার হয় না। দেশে এত সোনার চাহিদা নেই। এতেই সোনা চোরাচালানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত ও অনুসন্ধান হওয়া উচিত। সূত্র: কালের কণ্ঠ
একে