শনিবার | ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেলের ‘কালো বিড়াল’ সাবেক মন্ত্রী সুজন, শত কেলেঙ্কারির হোতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নূরুল ইসলাম সুজন দায়িত্বে থাকা অবস্থায় রেলের রাজধানী করতে চেয়েছিলেন নিজ জেলা ‘পঞ্চগড়’। করোনায় সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটায় তদন্তে অভিযুক্তদের পদোন্নতি দিয়েছেন তিনি। কাছের লোকদের দিয়েছেন নানা সুবিধা। অনেক অনিয়ম, দুর্নীতি হালাল করেছেন নিজ ক্ষমতা দিয়ে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ও ঠিকাদারদের পরামর্শে প্রকল্প গ্রহণে সায় দেওয়ার নজির অনেক।

রাজবাড়ী থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ ও পুরোনো লাইন সংস্কারে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করার সময় বলা হয়েছিল, এই রেললাইন দিয়ে দিনে ১৪টি ট্রেন চলাচল করবে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই রেলপথ উদ্বোধন করেন। এখন এ পথে ট্রেন চলছে মাত্র দুটি। আলোচনা আছে, মন্ত্রীর অদক্ষতা ও পরিকল্পনাহীনতার কারণেই রেলে বিপুল অর্থ ব্যয়ে প্রকল্প নির্মাণ হলেও প্রয়োজনীয় যাত্রী সুবিধা মেলেনি।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০০৯-২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৮৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এসব প্রকল্পে খরচ হয়েছে ২১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ সালে রেলের লোকসান ছিল ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে সংস্থাটির লোকসান দাঁড়ায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্থাটি লোকসান দিয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। সুজনের মেয়াদজুড়ে লোকসানের বোঝা নিয়ে চলেছে রেল।

সবচেয়ে বেশি অনিয়ম: বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ এই দুটি অর্থবছরে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে। অনিয়মের কারণে শুধু এ দুই অর্থবছরেই সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৭৭ কোটি ৫ লাখ ৭১ হাজার ২৩৩ টাকা।

রেলওয়েতে আর্থিক কেলেঙ্কারির এ চিত্র উঠে আসে বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয়ের নিরীক্ষা (অডিট) প্রতিবেদনে। অডিট অধিদপ্তর রেলওয়ের দুটি প্রতিষ্ঠানের ২০১৯-২০, একটি প্রতিষ্ঠানের ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ এবং আরেকটি প্রতিষ্ঠানের ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব-সম্পর্কিত কার্যক্রমের ওপর কমপ্লায়েন্স অডিট পরিচালনা করেছে। রেলওয়ের স্টোর বিভাগের ক্রয় ব্যবস্থাপনা এবং প্রধান প্রকৌশলীর আওতাধীন আবাসিক ভবন, অফিস ভবন মেরামত ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরের হিসাব-সম্পর্কিত কমপ্লায়েন্স অডিট রিপোর্টে ২৯ কোটি ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮০৭ টাকার অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে। কারখানাগুলোর ২০১৯-২০ অর্থবছরের হিসাব-সম্পর্কিত কমপ্লায়েন্স অডিট রিপোর্টে রয়েছে ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯২ টাকা অনিয়মের তথ্য। প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী, পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব-সম্পর্কিত কমপ্লায়েন্স অডিট রিপোর্টে ১০ কোটি ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার ৬৬১ টাকার আপত্তি রয়েছে।

এ ছাড়া রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক, প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী এবং প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক, সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব ও পশ্চিম) কার্যালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব-সম্পর্কিত কমপ্লায়েন্স অডিট রিপোর্টে ২৩ কোটি ২ লাখ ৯২ হাজার ৭৭৩ টাকা অনিয়মের তথ্য উল্লেখ রয়েছে। নূরুল ইসলাম সুজনের মেয়াদে রেলে এসব কাজ হয়েছে। অভিযোগ আছে, এসব দুর্নীতিতে মন্ত্রীর সায় ছিল।

লোকোমোটিভ ক্রয়ে দুর্নীতি: রেলের বহরে যুক্ত হওয়া ১০টি মিটার গেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ক্রয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা রেল ভবনে সবার মুখে মুখে। ইঞ্জিনগুলো ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়নি। চুক্তিতে তিন হাজার হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন দেওয়ার কথা থাকলেও দুই হাজার হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন সরবরাহ করা হয়েছে। ইঞ্জিন কেনায় এমন আরও দুটি ব্যত্যয় পাওয়া গেছে। ৩২২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা মূল্যের এসব ইঞ্জিন সরবরাহ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া সরকারের একটি সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে এই অনিয়ম-দুর্নীতিতে রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান, বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী এবং ঠিকাদার আফসার বিশ্বাস জড়িত বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের তত্ত্বাবধানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ও গোপনে ‘স্বাধীন পর্যবেক্ষক’ নিয়োগ করে অনিয়মগুলো আড়াল করে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। আর অনিয়ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো প্রতিবেদন দেয়।’

দুর্নীতি প্রতিরোধের ঘোষণা শুধু মুখে মুখেই: রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবে রূপ পায়নি। বরং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নিয়োগ দুর্নীতি মামলার দুই আসামিকে ফের নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। ওই দুই আসামি হলেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মো. জহিরুল ইসলাম ও পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মোহা. আশাবুল ইসলাম। ২০২২ সালের ৩০ জুন উপসচিব তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাদের আবারও আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূলত মন্ত্রীকে ম্যানেজ করেই এসব করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

তালা, বাঁশি ও বালতি কেনায় দুর্নীতি: ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলের আধুনিকায়নের নামে তালা, বাঁশি, বালতি, ঝাণ্ডাসহ ২০ ধরনের পণ্য কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে রেলের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। চট্টগ্রামে এ ঘটনার পর রেল মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি করে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুর রহিমকে প্রধান করে গঠন করা ওই কমিটি রেলমন্ত্রীর কাছে ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেনাকাটায় টাকা মেরে দেওয়ার সঙ্গে রেলের ১৭ কর্মকর্তা জড়িত। তাদের মধ্যে চারজনকে বরখাস্তসহ বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা এবং ১৩ জনের বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় মামলা করার কথা বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এ ঘটনায় মন্ত্রী নামমাত্র ব্যবস্থা নিলে শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হস্তক্ষেপ করে। গত বছরের শেষের দিকে দুদক চট্টগ্রাম রেলওয়েতে অভিযান চালায়। দুর্নীতি রোধে মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের একাধিক কর্মকর্তা।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে ওএসডি মাহবুব কবির: অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে খোলাখুলি কথা বলায় রেল মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলনকে ওএসডি করার ঘটনা ছিল অনেক আলোচিত বিষয়।

যোগ্যরা অবহেলিত, সুবিধা পেয়েছেন কাছের লোক: জানা গেছে, রেল কর্মকর্তাদের মধ্যে সুবিধাভোগীদের একজন যুগ্ম মহাপরিচালক তাবাসসুম বিনতে ইসলাম। ১৬ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয় তাকে। শুধু তাই নয়, বদলি ও পদোন্নতি থেকে শুরু করে টেন্ডার চূড়ান্ত করাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ক্ষমতা তার হাতে দেওয়া হয়। এর পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। মন্ত্রীর সঙ্গে সখ্যের কারণে তাবাসসুম প্রায় ৪০টির বেশি দেশে সরকারিভাবে ভ্রমণ করেছেন বলেও অভিযোগ আছে।

অন্যদিকে রেলের সরঞ্জাম বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের ভাগ্নি জামাই। সুজন রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার দিন আনোয়ার চট্টগ্রামে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে ৫ মণ মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন। শ্বশুর মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে আনোয়ার সবসময় একসঙ্গে দুই থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন।

১০ খাতে দুর্নীতি রয়েই গেছে: টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ২০ বছরমেয়াদি রেলওয়ের করা মাস্টারপ্ল্যান, যা ২০৩০ সাল পর্যন্ত অনুমোদিত। এর অধীনে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এই টাকা চার ধাপে ব্যয় করার কথা। এর অধীনে ২৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্প রেলে গ্রহণ করা হয়।

এসব প্রকল্প ঘিরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম আর দুর্নীতি হয় বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। রেল সেক্টরে ১০টি খাতে সরকারি অর্থ লুটপাটের মহোৎসব হয়েছে বলে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০১৯ সালে দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের হাতে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে দিয়েছিলেন।

কভিড সুরক্ষা সামগ্রী কেলেঙ্কারির হোতাদের পদোন্নতি: রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া ছাড়াই কভিড-১৯ প্রতিরোধমূলক সুরক্ষা সরঞ্জাম কেনা এবং সেগুলো নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি মূল্যে ক্রয় নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর যুগ্ম সচিব ফয়জুর রহমান ফারুকিকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। কমিটির বাকি দুই সদস্য ছিলেন যুগ্ম মহাপরিচালক (প্রকৌশল) শহীদুল ইসলাম ও মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাজমুল হক।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন ঠিকাদারের কাছ থেকে ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকার জিনিসপত্র কেনা হয়েছিল। কেনাকাটায় অনিয়মের সঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ২১ কর্মকর্তা জড়িত বলে উল্লেখ করে ‘সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে’ মর্মে সুপারিশ করা হয়েছিল প্রতিবেদনে।

তবে সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের পরিবর্তে উল্টো অভিযুক্ত ১০ জনের বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেন সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন।

রেলের পঞ্চগড়মুখী উন্নয়ন: ২০১৮ সাল পর্যন্ত পঞ্চগড়ে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন ছিল না। ২০১৯ সালে ওই জেলার সন্তান নূরুল ইসলাম সুজন পান রেলমন্ত্রীর চেয়ার। এর পরই নিজ এলাকায় রেল পরিষেবার কলেবর ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেন। দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে তিন বছরে রেলের বহরে যুক্ত হয় ছয়টি আন্তঃনগর ও একটি আন্তঃদেশীয় ট্রেন। পঞ্চগড় ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে দুটি পেয়েছে এবং আরও একটি আন্তঃনগর ট্রেনসেবা এ জেলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।

রেলের একাধিক সূত্র জানায়, মন্ত্রী তার নিজ জেলায় বাড়তি রেল সুবিধা চালু করতে গিয়ে অন্যান্য জেলাকে বঞ্চিত করেছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে এমনকি অন্য একটি ট্রেন থেকে নতুন রেক সরিয়ে এনে পঞ্চগড়মুখী ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

২০১৯ সালে পঞ্চগড় স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন’ রাখা হয়। যার নামে এই নামকরণ করা হয়েছে, তিনি রেলমন্ত্রীর প্রয়াত ভাই।

কোনো প্রকল্পই শেষ হয়নি: রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন দায়িত্ব নেওয়ার তিন বছরের মধ্যে ১১টি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে তার মেয়াদকালে একটিও শেষ হয়নি।

নূরুল ইসলাম সুজন মন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। এর উদ্দেশ্য ছিল সুনামগঞ্জ জেলা সদরকে রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও রেলপথ তৈরির বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন। ৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিচালিত এই সমীক্ষাটি ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে এ সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নেওয়া হলেও তা এখনো শেষ হয়নি।

চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আখাউড়া-সিলেট রেলপথকে মিটার গেজ থেকে ডুয়াল গেজে রূপান্তর করতে ২০১৯ সালের এপ্রিলে তার আমলের দ্বিতীয় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এটিও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। প্রকল্পের বর্তমান সময়সীমা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।

পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। সম্ভাব্য সম্প্রসারিত এ রেলপথের সমীক্ষা ও নকশার কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র।

রেল মন্ত্রণালয় পরিচালনায় নূরুল ইসলাম সুজনের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘যেসব বিষয় নিয়ে সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, স্বচ্ছতার জন্য সেসব বিষয়ে তদন্ত হতে পারে। আর তার রেখে যাওয়া ব্যর্থতা সফল করার দায়িত্ব বর্তমানে যারা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন তাদের।’

সার্বিক বিষয়ে নূরুল ইসলাম সুজনের বক্তব্য জানতে একাধিক দিন সুপ্রিম কোর্ট ভবন ও হাতিরপুলের চেম্বারে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি চেম্বার করছেন না বলেও জানা গেছে। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে। সূত্র: কালবেলা এআরএস

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- Payra Team