নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর প্রচণ্ড রকমের উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে দেওয়া হয়েছে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত। সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরার পথে ৬ টলার ডুবিতে ২ জেলে মারা গেছেন। শতাধিক ট্রলার এখনো সাগর রয়ে গেছে। অব্যাহত রয়েছে ভারী বর্ষণ।
জানা যায়, এযাবতকালের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত (৫০১ মিলিমিটার) রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে। বৃষ্টিতে জলমগ্ন হোটেল মোটেল জোন। ৬০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। পাহাড় ধ্বসে নিহতদের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে আর্থিক সহযোগিতা। অব্যাহত ভারী বর্ষণে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
কক্সবাজারে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে বর্ষণ। এরপর থেকে কখনো মাজারি, কখনো হালকা, সেই সাথে ধমকা ও ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুছাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর বাতাসের আদ্রতা বেড়ে গেছে। সে সাথে দমকা ও ঝড়ো হওয়া বয়ে যাচ্ছে।
ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও কক্সবাজার সদরে নারী শিশুসহ মারা গেছে ৬ জন।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকালের দিকে সাগর থেকে ফেরার পথে সাগরের ইনানী পয়েন্টে ৫ টি ও কক্সবাজার সৈকতের পশ্চিমের পয়েন্টে একটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে সব মাছ ধরার ট্রলারের মাঝিরা সাঁতার কেটে অন্য ট্রলারে উঠে আসলেও কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার চড়া এলাকার শাহজাহানের মালিকানাধীন এফবি আল্লাহর দান নামের ট্রলারের এক শ্রমিককে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, এ পর্যন্ত সাগর থেকে শতাধিক ট্রলার ফিরে আসেনি। এসব ট্রলারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে না। আবহাওয়া অফিস থেকে কোন সর্তকতা জারি না করার কারণে এসব ট্রলারগুলো মাছ ধরতে যায় বলে তিনি জানান। কিন্তু হঠাৎ দমকা ঝড়ো হওয়া, সে সাথে নিম্নচাপ আর তিন নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করার পর তারা ট্রলার গুলোকে ফিরে আসার নির্দেশনা দেন।
ভারী বর্ষণের ফলে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদরের ৬০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে এসব এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এসব এলাকার লোকজন দারুণ কষ্টে কাল যাপন করছে বলেও জানান তারা।
কক্সবাজার হোটেল হোটেল জোন গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, অব্যাহত ভারী বর্ষণের ফলে হোটেল হোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পর্যটকরা হোটেলে আটকা পড়েছে। অনেক হোটেলের নিচতলায় পানি উঠায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা বৃষ্টির কারণে কষ্টে পড়েছেন বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফার ইয়াসমীন চৌধুরী সদর উপজেলার ডিককুল এলাকায় পাহাড় ধসে নিহতদের পরিবারের খোঁজখবর নিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানান, নিহতদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদ দেশে ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে স্থানে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, নিম্নচাপের প্রভাবের সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজারে এ যাবত কালের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত ছিল ৫০১ মি.। এযাবৎকালে এত বৃষ্টিপাত হয়নি বলেও জানান তিনি। শনিবার সারাদিন বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনার কথাও জানান আবহাওয়া অধিদপ্তর।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম খুলেছে।
কক্সবাজারের নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পাহাড় ধসে নিহতদের পরিবার কে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি, অতি বর্ষণের ফলে পানিপন্দি হয়ে পড়া মানুষের ব্যাপারে সব রকমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দুর্যোগ প্রবণ এলাকার মানুষগুলোকে নিরাপদ রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার কথাও জানান জেলা প্রশাসক।