স্পোর্টস ডেস্ক: ম্যাচের ফল অনেক সময় সঠিক বার্তা দেয় না। যেমন দিচ্ছে না আজ রাতে রিয়াল মাদ্রিদ–স্টুটগার্টের ম্যাচেও। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুয়ে ম্যাচের শুরুতে রিয়ালের ওপর রীতিমতো ছড়ি ঘুরিয়েছে জার্মান ক্লাবটি। কিন্তু ম্যাচ জিততে হলে যে গোল করতে হয়, সেই কাজটিই করতে পারেনি তারা।
চাপ সামলে রিয়াল ঠিকই ম্যাচে ফিরেছে চ্যাম্পিয়নের মতো। রিয়ালের জার্সিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিষেকে গোল করলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে ও এনদ্রিক। আর ঘরের মাঠে বদলে যাওয়া চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল পেল শুভসূচনা। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের জয় ৩–১ গোলে। রিয়ালের হয়ে অন্য গোলটি করেছেন আন্তোনিও রুডিগার।
এর মধ্যে অবশ্য আলাদা করে বলতে হবে এনদ্রিকের গোলটির কথা। প্রতিপক্ষ বক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে বল নিয়ে এককভাবে ছুটে গিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। এর ফলে রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতাও হলেন এনদ্রিক। রিয়ালের হয়ে গোল করার সময় এনদ্রিকের বয়স ছিল ১৮ বছর ৫৮ দিন। এতদিন এই রেকর্ড ছিল রিয়াল কিংবদন্তি রাউল গঞ্জালেসের দখলে। তিনি গোল করেছিলেন ১৮ বছর ১১৩ দিনে।
রিয়ালের মাঠে ম্যাচের প্রথম আক্রমণটা করে স্টুটগার্ট। যদিও কাছাকাছি গিয়েও গোল পায়নি তারা। পাল্টা জবাবে রিয়ালও কয়েকবার আক্রমণে যায় কিন্ত গোলের দেখা পায়নি তারাও। এরপর অবশ্য ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় স্টুটগার্ট। একটু পর অবিশ্বাস্য ভুলে একটি সুযোগও হাতছাড়া করে তারা। এরপর স্টুটগার্টের সামনে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়ে রিয়াল। আক্রমণের পর আক্রমণে রিয়াল ডিফেন্সের ওপর ঝড় বইয়ে দেয় জার্মান ক্লাবটি। এ সময় বোঝায় যাচ্ছিল না কোনটি রিয়াল আর কোনটি স্টুটগার্ট।
এদিন রিয়ালের পোস্টের নিচে থিবো কোর্তোয়া দেয়াল তুলে না দাঁড়ালে ২০ মিনিটের আগেই কয়েক গোল খেয়ে বসতে পারত বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ধীরে ধীরে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ম্যাচে আধিপত্য তৈরির চেষ্টা করে রিয়াল। দারুণ এক আক্রমণে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকেও পড়েছিলেন এমবাপ্পে। কিন্তু গোলরক্ষককে ফাঁকি দিতে পারেননি এ ফরাসি তারকা। ২৮ মিনিটে অবশ্য আবারও স্টুটগার্টের প্রচেষ্টা বারে লেগে প্রতিহত হয়।
আক্রমণ প্রতি–আক্রমণে জমজমাট ম্যাচে পরের সুযোগটি পেয়েছিল রিয়ালই। কিন্তু তারাও পারেনি গোলের খাতা খুলতে। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল রিয়াল। যদিও ভিএআরে যাচাইয়ের পর বাতিল সেই পেনাল্টি। পাল্টাপাল্টি সুযোগ তৈরির লড়াইয়ে এরপর গোলের সুযোগ এসেছিল স্টুটগার্টের সামনে। কিন্তু যথারীতি তারা ধরে রাখে গোল করতে না পারার ধারা। প্রথমার্ধের শেষ দিকে অবশ্য স্টুটগার্টের চেয়ে রিয়ালের আধিপত্যই ছিল বেশি। যদিও সেই আধিপত্য গোল আদায়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
বিরতির পর অবশ্য ম্যাচের দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে যায়। ৪৬ মিনিটে রদ্রিগোর অ্যাসিস্টে দূরের পোস্টে ট্যাপ ইন করে গোল করেন এমবাপ্পে। গোলের পর ম্যাচে নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ক্লাবটি। একটু পর আবারও সুযোগ আসে এমবাপ্পের সামনে। তব এবার অবশ্য গোলের দেখা পাননি এই ফরাসি তারকা।
কিছুক্ষণ পর ভিনিসিয়ুসের শট বারে না লাগলে ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারত রিয়াল। ধাক্কা সামলে প্রতি–আক্রমণ থেকে স্টুটগার্ট অবশ্য চেষ্টা করছিল ম্যাচে ফেরার। কাছাকাছি গিয়ে একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে তারা। তবে ৬৮ মিনিটে বার্নাব্যুর গ্যালারিকে স্তব্ধ করে দেন দেনিজ উনদাভ। স্টুটগার্টকে প্রাপ্য গোলটি এনে দেন তিনি।
ম্যাচে সমতা আসার পর দুই দলই গোলের চেষ্টা করেছিল। তবে ফিনিশিং দক্ষতায় বাজিমাত করে রিয়ালই। যদিও দ্বিতীয়বার এগিয়ে যেতে রিয়ালকে অপেক্ষা করতে হয় ৮৩ মিনিট পর্যন্ত। কর্নার থেকে হেডে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন রুডিগার। এরপর ম্যাচ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে প্রায় একক প্রচেষ্টার দুর্দান্ত গোলে রিয়ালের জয় নিশ্চিত করেন এ্রনদ্রিক। এই গোল দিয়ে রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে নতুন অধ্যায় শুরু করলেন কদিন আগে ১৭ পেরোনো এনদ্রিক।
একে