মঙ্গলবার | ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন তোফাজ্জল

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে আটক তোফাজ্জল (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত তোফাজ্জল প্রেমসংক্রান্ত ব্যাপারে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যান। যার কারণে পরিবার ও অভিভাবকহীন হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন তোফাজ্জল। মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে তোফাজ্জল পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন বলে জানা যায়।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান আল ইমরান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এসব তথ্য জানান।

আরিফুজ্জামান আল ইমরান লেখেন, ‘তোফাজ্জল আমার জন্মস্থান বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার সন্তান। তোফাজ্জল পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। এই ছেলেটি বেশ স্বজ্জন, পরোপকারী ও নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন ছাত্রনেতা ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে প্রেমসংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় প্রথমে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারায়। এর কিছুদিনের মধ্যে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যান। তোফাজ্জল পরিবার ও অবিভাবকশূন্য হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে। বিগত ২ থেকে ৩ বছর তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশবিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াত। আমাদের এলাকার যারা ওরে চিনত সবাই সহযোগিতা করত। ক্যাম্পাসে আমাকে দেখলেই দৌড়ে এসে কুশল বিনিময় করত। আমি দেখা হলে ওরে খাবার খেতে বলতাম বা খাওয়ার জন্য টাকা দিতাম অথবা ও মাঝেমধ্যে চেয়ে নিত। খাবার ও খাবার টাকার বাইরে ওর তেমন কোন চাহিদা ছিল না।’

তিনি আরও লেখেন, ‘হয়তো আজকেও খাবারের জন্য ও এফএইচ (ফজলুল হক মুসলিম) হলে গিয়েছিল। আজকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলের ছোট ভাই সাংবাদিক কবির কাননের ফেসবুক ওয়ালে তোফাজ্জলকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেখি যে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে এফএইচ হলে আটক করেছে। আমি দেখামাত্রই ফোন করে তোফাজ্জলের বিষয়ে কাননকে অবগত করি যে ও আমার এলাকার ছেলে, আমি ওরে ব্যক্তিগতভাবে জানি, বর্তমানে ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। হয়তো খাবারের সন্ধানে তোফাজ্জল এফএইচ হলে গেছে। আমি কাননকে বলেছিলাম তুমি ওখানে যারা এখন ওরে আটকে রেখেছে তাদের সঙ্গে কথা বলো, তোফাজ্জল যে মানসিক ভারসাম্যহীন এটা ওদের অবহিত কর, যাতে ওরে শারীরিকভাবে টর্চার না করে। কানন কিছুক্ষণ পরে আমাকে ফোন দিয়ে জানায় ভাই অরে আর কেউ টর্চার করবে না, তবে আপনি অর কোনো অভিভাবক কাউকে পাঠান যার কাছে তোফাজ্জলকে দিয়ে দেবে, আমি সেই ব্যবস্থা করতেছি। এরপর আমি আমাদের এলাকার বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি এফএইচ হলে গিয়ে তাকে নিয়ে আসার জন্য কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকে ম্যানেজ করতে পারিনি। ২ ঘণ্টার ব্যবধানে ফেসবুকে দেখি তোফাজ্জল এফএইচ হলের শিক্ষার্থীদের নির্মম নির্যাতনে মারা গিয়েছে।’

ইমরান আফসোস প্রকাশ করে লেখেন, ‘আহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! ছাত্র নামধারী বিবেকহীন এই নরপিশাচদের জন্য আজকে একটি নিরপরাধ প্রাণ চলে গেল, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলংকিত হলো। তোফাজ্জল হত্যার বিচার চাওয়ার মতো ওর পরিবারে অবশিষ্ট আর কেউ নেই। তবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচার নিশ্চিত করতে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়ে যাব।’

একে

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- Payra Team