নিজস্ব প্রতিবেদক: গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এই গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শেখ হাসিনা। তাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে, ফাঁসি দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে গণঅধিকার পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, হামলাকারীদের পরিচয় চিহ্নিত করে সব অপরাধীর বিচার করতে হবে। ছাত্র-জনতারওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ নৃশংস যে হত্যা চালিয়েছে, সেটা কেবল কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনই করতে পারে। বিশ্বের কাছে এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধের দাবি তুলতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সুবিধাবাদী দল জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। এই দালাল পার্টি সব সময় জনগণের বিপক্ষে গিয়ে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে। এই জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। এই ভাইরাস পার্টি যেন দেশে আগামীতে রাষ্ট্রের কোনো আলাপ-আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে, এই দালালদের কোনো ঠাঁই নেই।’
দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফ্যাসিবাদ কায়েম, পিলখানায় সেনা অফিসার হত্যা, শাপলা চত্বরে আলেম হত্যাসহ সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার হত্যাকারীদের বিচারসহ জড়িত সকলের বিচার এবং গণহত্যায় জড়িত অভিযোগে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদের (নুর) উদ্যোগে এই অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। পরে পুরানা পল্টন ও দৈনিক বাংলা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়।
ভিপি নুর বলেন, দেশে ইতোমধ্যে নব্য দখলদারের দেখা মিলেছে। মানুষের বাড়ি-ঘর দখল করছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করছে, এক সাইনবোর্ড নামিয়ে আরেক সাইনবোর্ড লাগাচ্ছে। এই দখলদারিত্বের জন্য তো ছাত্র-জনতা জীবন দেয়নি। আমরা স্পষ্ট করে বলি, এসব চাঁদাবাজি চলবে না, এসব কিছু জনগণ মেনে নিবে না।
শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবি ভিপি নুরেরজামায়াত ও ১২ দলীয় জোটের মতবিনিময় সভা নুরুল হক নুর বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো অপরাধী ছাড় পাবে না। ইতোমধ্যে অনেকেই ধরা পড়েছে, আরও অনেকেই ধরা পড়বে, একজনও ছাড় পাবে না। সালমান এফ রহমান ও আনিসুর রহমানকে আটক করা হয়েছে এক ব্যবসায়ী হত্যাকান্ডের মামলায়। ধানমন্ডির সেই হত্যাকাণ্ডের কোনো প্রমাণ নেই। এতে করে এসব মামলায় তারা সহজে খালাস পেতে পারেন। তাই প্রমাণসহ সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোর বিষয়ে মামলা করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, আওয়ামী লীগের অতীতের সব ইতিহাস বিলীন হয়ে গেছে ছাত্র-জনতার ওপর এই গণহত্যার মাধ্যমে। কেউ অপরাধ করার পর তার অতীত বিবেচনায় এনে মাফ করে দেওয়া যায় না। সুতরাং ১৫ বছরের গুম-খুন ও গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে খুনিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। প্রশাসনের যারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখেছিল, দুর্বৃত্তায়ন করেছে- তাদেরকে চাকরিচ্যুত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তিনি তার লোভের কারণে দেশটাকে শেষ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই রাষ্ট্রের যাবতীয় সংস্কার ছাড়া আমাদের মুক্তি নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই রাষ্ট্র মেরামত করতে হবে। রাষ্ট্রের সংস্কার এইবার না করতে পারলে আর কোনদিন সংস্কার হবে না। সুতরাং উপদেষ্টাগণের প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনারা দ্রুত রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা প্রদান করুন। আমরা জাতীয় সংসদে ৫০ শতাংশ তরুণ এমপি দেখতে চাই। কোনো দুর্নীতিবাজ, কালোবাজারি, মাফিয়া টাকা ছিটিয়ে এমপি হতে পারবে না। স্বচ্ছ, দেশপ্রেমিক, ক্লিন ইমেজের নেতাদের এমপি হওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে। জনগণের প্রতি আহ্বান, আপনারা সোচ্চার থাকুন। কোনো প্রতিবিপ্লব হতে দেওয়া হবে না। পাড়া-মহল্লায়, সীমান্তে, হাট-বাজারে আমাদের পাহারা বসাতে হবে। চক্রান্তকারীদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান ও রবিউল হাসানের যৌথ সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন- দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, জসিম উদ্দিন আকাশ, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, প্রচার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শওকত, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সুহেল রানা সম্পদ, ছাত্রনেতা নওয়াজ খান বাপ্পি প্রমুখ।