বুধবার | ৪ জুন, ২০২৫ | ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

কুমিল্লায় ‘ঘরে ঘরে’ ছড়িয়ে পড়ছে চর্মরোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি: কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়ায় অন্যান্য রোগের তুলনায় চর্মরোগ বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। দিন দিনই বাড়ছে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বন্যাপরবর্তী সময়ে এ রোগ যেন আরও বেশি বেড়েছে। যেন ‘ঘরে ঘরে’ ছড়িয়ে পড়ছে চর্মরোগ।

বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে এ ধরনের রোগে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা সাম্প্রতিক বন্যার দূষিত পানি, পরিবেশদূষণ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস ও ত্বকের যত্নের অভাবকেই দায়ী করছেন। তবে শিশুদের আক্রান্তের সংখ্যায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা। এ থেকে উদ্ধারে পারিবারিক সচেতনতাই প্রথম প্রতিরোধ বলে মনে করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে চর্ম রোগীর সংখ্যাই বেশি। সেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে দেখা গেছে, কেউ এসেছেন পুরো শরীরে ঘামাচির মতো ছোট ছোট ফুসকুড়ি সঙ্গে তীব্র চুলকানি। কেউ এসেছেন খোসপাঁচড়া নিয়ে, আবার কেউ এসেছেন স্কেবিস নিয়ে। কেউ কেউ এসেছেন চুলকানি নিয়ে। কেউ এসেছেন হিট র‍্যাশ নিয়ে। এ ছাড়াও চর্ম রোগের নানা লক্ষণ নিয়ে এসেছেন রোগীরা। এ চিত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালেও। বন্যাপরবর্তী সময়ে এর প্রকোপ অনেকাংশে বেড়েছে।

চিকিৎসকরা বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে জানান, দিন দিনই আমাদের পরিবেশ নানা কারণে দূষিত হচ্ছে। এই দূষণের ফলে পরিবেশ তার ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছে না। যার ফলে এই পরিবেশ ঘিরে আমরা যারা বসবাস করছি এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমাদেরকেই বহন করতে হচ্ছে। এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ারই একটি হচ্ছে মানবদেহে নানাভাবে দেখা দেওয়া চর্মরোগ। এ ছাড়া ত্বকের যত্নের অভাবে, অপরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণেও চর্মরোগ হচ্ছে। সাম্প্রতিক বন্যার দূষিত পানির কারণে ইদানীং চর্মরোগী আরও বেশি বেড়েছে।

চিকিৎসকরা জানান, মানবদেহে অ্যাকজিমা হচ্ছে ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাবেও, তবে এ রোগ শিশুদের ক্ষেত্রে মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। চর্মরোগের প্রকোপ সাধারণত শীতকালে দেখা দিলেও ছত্রাকজনিত রোগ, একজিমা, টিনিয়া বা দাউদ শীতগ্রীষ্ম নয় পুরো বছরজুড়েই মানবদেহে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

চিকিৎসকরা শঙ্কা জানিয়ে আরও জানান, চর্মরোগে আক্রান্ত জটিল রোগী, বিশেষ করে শিশুদের চিকিৎসায় সময় লাগে বেশি। অনেক লম্বা সময় ধরে চালাতে হয় চিকিৎসা। কেউ কেউ রোগটি পুরোপুরি নির্মূল হওয়ার আগেই অবহেলা করে ওষুধ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে শরীরে জীবাণু আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যে কারণে রোগটি জটিলপর্যায়ে পৌঁছে যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শঙ্খজিৎ সমাজপতি বলেন, চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে হয় একটু লম্বা সময় ধরে। এটা জ্বর বা সর্দিকাশির মতো অল্প সময়ের চিকিৎসায় আরোগ্য মেলে না। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এ উপজেলার অধিকাংশ রোগী পল্লী চিকিৎসক থেকে ভুলভাল চিকিৎসা নিয়ে রোগটিকে জটিল পর্যায়ে এনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। এতে ওই ধরনের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া অনেকটা কঠিন হয়ে ওঠে। এতে রোগীর চিকিৎসার ব্যয়ও বেড়ে যায়। আবার অনেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, নানাভাবে পরিবেশদূষণ হচ্ছে। এর ফলে মানবদেহে বাসা বাধছে নানা রোগ। এসব রোগের মধ্যে চর্মরোগ বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবীসহ নানা জীবাণু দ্বারা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। সম্প্রতি বন্যার পানিতে উপজেলার সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। যার ফলে বন্যার দূষিত পানির কারণে চর্ম রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের পরামর্শের পাশাপাশি হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীরা সঠিক নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিলে এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে।

 

এআরএস

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM