মঙ্গলবার | ১৩ মে, ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ, ১৪৩২

জবি শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, বহিষ্কারের দাবিতে শ্রেণিকক্ষে তালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের পক্ষে কলাম লেখার অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু সালেহ সেকেন্দারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সব শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন বিভাগটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এরপর বিভাগের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে উপাচার্য ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা।পরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর আবু সালেহ সেকেন্দারের স্থায়ী বহিষ্কারসহ ৪ দফা দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন। শিক্ষার্থীদের চার দাবি হলো—আজকের মধ্যে শিক্ষক আবু সালেহ সেকেন্দারকে সাময়িক বহিষ্কারসহ বেতন ভাতাদি ও সব সুযোগ সুবিধা বন্ধ করতে হবে; আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্টের মাধ্যমে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে; একাডেমিক কমিটির অব্যাহতি ২০১৯ এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত অন্যায্যভাবে বেতন ভাতা ও আর্থিক সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছেন, তা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; যতক্ষণ পর্যন্ত সাময়িক বহিষ্কার ও তদন্ত সাপেক্ষে স্থায়ী বহিষ্কার এবং আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত সব প্রকার ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
এ বিষয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ আহম্মেদ বলেন, ছাত্রলীগের পক্ষে কলাম লিখে জুলাই বিপ্লবকে অসম্মান ও অবহেলা করেছেন তিনি। জুলাই বিপ্লব শেষে আমরা প্রায় দুই হাজার প্রাণের বিনিময়ে এই পরিবর্তন পেয়েছি। এই পরিবর্তনকে নস্যাৎ করতেই স্বৈরাচারের দোসররা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। আবু সালেহ সেকেন্দার তাদেরই একজন। এই পরিস্থিতিতে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার ও সব বেতন ভাতা স্থগিতের দাবি জানাচ্ছি।
আরেক শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান কায়েস বলেন, থিসিস চুরি ও নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার দায়ে ২০১৯ সালে ডিপার্টমেন্ট থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়া হয় আবু সালেহ সেকেন্দারকে। এরপর শুধু কলাম লেখেন আর বসে বসে বেতন নেন। আওয়ামী লীগের সময় প্রভাব খাটিয়ে ও বিরোধী শিক্ষকদের জামায়াত-শিবির ও জঙ্গি আখ্যায়িত করেন মানসিক পীড়া দিতেন তিনি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, যখন শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে, তখন কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ করেননি। এখন তারা সাধু সাজছেন। যারা আগস্টে হত্যাকাণ্ডের অংশ ছিলেন, তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দিলে শহীদ সাজিদ, আবু সাইদ ও মুগ্ধরা কষ্ট পাবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নূর নবী বলেন, বিগত সময়ে যারা স্বৈরাচার সরকারের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং গুম-খুন করতেন, তারাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। শুধু ছাত্রলীগের পদের কারণে তারা শিক্ষক হয়ে এসেছিলেন। তার মধ্যে সালেহ সেকেন্দার একজন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সালেহ সেকেন্দারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আন্দোলনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এরপর তিনি কল কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, একটি জাতীয় অনলাইন পোর্টালে শিক্ষক আবু সালেহ সেকেন্দার ‘ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ বুদ্ধিবৃত্তিক ভুল সিদ্ধান্ত’ শিরোনামে কলামে উল্লেখ করেন, ‘যে আইনের ধারায় ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করেছে তা বেশ হাস্যকর ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছে। আল-কায়েদা বা আইএস নিষিদ্ধ করা আর ছাত্রলীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা এক বিষয় নয়। ’ এর পরেই ফুঁসে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

© 2024 payranews.com | About us | Privacy Policy | Terms & Condidtion
Developed by- SHUMANBD.COM